গাজার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ৬ শতাংশ
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর গত ১৫ মাসে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ৬ শতাংশ। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তর পিসিবিএস।
পরিসংখ্যান দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ মাসে গাজায় প্রাণহানি ঘটেছে প্রায় ৪৫ হাজার ৫০০ জন ফিলিস্তিনি এবং নিখোঁজ হয়েছেন আরও ১১ হাজার ফিলিস্তিনি। এতে মোট নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৫ হাজার। এছাড়া যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে গাজা ছেড়েছেন ১ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
২০২৩ সালে ইসরায়েলি বাহিনী যখন গাজায় অভিযান শুরু করে, সে সময় সেখাকার জনসংখ্যা ছিল ২১ লাখের কিছু বেশি। এই জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশই ছিল ২৮ বছরের কম বয়সী। ফিলিস্তিনের পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর গাজায় জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার জন।
“ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান অত্যন্ত নির্মম এবং আগ্রাসী। যে এলাকায় ইরায়েলি সেনারা গিয়েছে, সেখানে মানুষের পাশাপাশি অন্য কোনো প্রাণীকে জীবিত রাখেনি তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে কোনো পরিবারের সব সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া গাজার বিভিন্ন ভবন ও অবকাঠামোও ধ্বংস হয়ে গেছে। এক কথায় গাজায় মানবিক ও বস্তুগত যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা যে কোনো বিচারেই বিপর্যয়কর”, বলা হয়েছে পিসিবিএসের বিবৃতিতে।
আরও বলা হয়েছে, গাজায় বর্তমান বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ২২ শতাংশ ভয়াবহ মাত্রায় খাদ্য, শীতবস্ত্র, ওষুধ ও জ্বালানি সংকটে ভুগছেন। যদি উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক না হয়, তাহলে এবার শীত শেষ হওয়ার আগে অন্তত ৩ হাজার ৫০০ জন শিশুর মৃত্যু হবে সেখানে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য ফিলিস্তিনের পরিসংখ্যান দপ্তরের এই বিবৃতিতে ‘ভুয়া, অতিরঞ্জিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ উল্লেখ করা পাল্টা এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলকে অপমানের জন্য এই ‘বানোয়াট’ তালিকা প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সরকার।
২০২৩ সালে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনও চলছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করছে এবং হামাসকে ধ্বংস করার আগ পর্যন্ত গাজায় অভিযান চলবে।
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ