লন্ডনের যে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন অসহায় ব্যক্তিরা
যুক্তরাজ্যের অভিজাত এলাকা সেন্ট্রাল লন্ডনে সম্প্রতি নতুন একটি রেস্টুরেন্ট চালু করা হয়েছে। হোম কিচেন নামের এই রেস্টুরেন্টে সমাজের অসহায় মানুষদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। তার আগে তাদের রান্না থেকে শুরু করে অতিথিদের সেবা দেওয়া-সহ সব ধরনের কাজ শেখানো হয়।
রেস্টুরেন্টের ওয়েটার জেরেমি কোটস বলেন, ‘‘আমার মতো অনেকে ছোটবেলায় স্থিতিশীল জীবন ও পরিবার পায়নি। এমন মানুষেরা জীবনের কোনও উদ্দেশ্য না থাকায়, কোনও নেটওয়ার্ক না থাকায় সহজে হারিয়ে যেতে পারেন। এই অবস্থায় সবাইকে নিজের চেষ্টা দিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।’’
এই প্রকল্পের অন্যতম ব্যক্তি শেফ অ্যাডাম সিমন্ডস। কয়েক বছর আগে তার নিজেরও এমন কঠিন সময় পার হতে হয়েছে এবং তখন তার প্রায় রাস্তায় বসবাসের উপক্রম হতে হয়েছিল। সিমন্ডস বলেন, ‘‘সবারই সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে। মানুষ রাস্তায় অনেক গৃহহীন ও সমস্যায় থাকা মানুষ দেখে। তারা শুধু তাদের বাহিরটা দেখতে পান, ভেতরেরটা না। তারা বুঝতে পারেন না, কেন তারা রাস্তায়। মানুষ নিজ ইচ্ছায় রাস্তায় থাকতে চায় না। পরিস্থিতির কারণে তাদের সেখানে থাকতে হয়।’’
পল, যিনি তার নামের শেষ অংশটি প্রকাশ করতে চান না, তিনি অনেকটা সময় কারাগারে ছিলেন। সেখানে রান্না শিখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘যখন জেলে ছিলাম তখন আমি আমার নিজের একটি থাকার জায়গা, নিজের ক্যাফে চাইতাম। সেটা আমার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু যখন জেল থেকে বের হলাম তখন মনে হলো, জেলে থাকার কারণে আমার হয়ত সেসব পাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ আপনি একজন সাবেক অপরাধী। কিন্তু এখানকার মানুষেরা আমার মতো মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। আমার জন্য এটা স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার। আমি নিজেকে চিমটি কেটে বোঝার চেষ্টা করেছি, এটা সত্যিই ঘটছে?’’
মেনুতে কাঁকড়া, সবজি আর মাছ আছে। ছয় পদের খাবারের দাম কম নয়। তাই অতিথিরা কি অনবদ্য সেবা আশা করেন না? অ্যাডাম সিমন্ডস বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের সেবা দেওয়ার গতি ধীর হতে পারে, কিছু ভুলও হতে পারে। তবে আশা করছি, যারা ওই দরজা দিয়ে ঢুকবেন তারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং মেনে নেবেন যে, খাবারের জন্য তাদের আরও ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হতে পারে।’’
হোম কিচেন কিছুটা দানের ওপর চলছে। তাই শুরুতেই যে তাদের লাভ করতে হবে এমন নয়। তবে ব্যবসায় দীর্ঘদিন টিকে থাকতে চাইলে অতিথিরা যেন সন্তুষ্ট হন সেটা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
লিন্ডা ফার্স্টেনডিক নামের একজন অতিথি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আইডিয়াটা দারুণ। আমি আশা করবো তারা এখান থেকে শিখে নিজেদের আরও অনেক দূর নিয়ে যাবে। তারা যদি ভবিষ্যতে ক্যাটারিংয়ে যেতে চায় তাহলে একেবারে নিচ থেকে কাজ শিখে ওপরে যাওয়া ভালো।’’
সেখানকার অনেক কর্মী সেটিই চান। জেরেমি কোটস আজ মন দিয়ে কাজ করছেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আশাবাদী। কোটস বলেন, ‘‘আমি ব্ল্যাক হোলের মতো। আমি সবকিছু শিখতে চাই এবং তারপর আমাকে পুরোপুরি তৈরি করতে চাই। দক্ষ হয়ে উঠতে চাই। এরপর সম্ভবত ভবিষ্যতে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চাইবো।’’
লুকিয়ে থাকা মেধাবীদের লালনপালন করতে চায় হোম কিচেন। সেখানে কাজ করা সবার দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হতে চায় তারা।
এসএস