এক ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ইরানি রিয়াল
ডলারের বিপরীতে ইতিহাসের সর্বনিম্ন দরপতন ঘটেছে ইরানের মুদ্রা ইরানি রিয়ালের। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে বর্তমানে এক ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার রিয়াল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ৬ নভেম্বর; সেই নির্বাচনে বিজয়ী হন ট্রাম্প। ওই দিন ইরানে এক ডলারের বিপরীতে রিয়ালের দর ছিল ৭ লাখ ৩ হাজার। তার প্রায় দেড় মাস পর ঐতিহাসিক এই দরপতন ঘটল ইরানি রিয়ালের।
রিয়ালের এই দুর্দশার প্রধান কারণ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ও জ্বালানি সংকট। মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে যুদ্ধ চলছে, তাতে জড়িয়ে পড়েছে ইরান। অতীতে এক সময় ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা বিক্রি করত। এতে রিয়ারলের দরেও মোটামুটি স্থিতিশীলতা থাকতো।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিন অবশ্য সোমবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইরানে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে এবং ডলারের বিপরীতে রিয়ালের বিনিময় হারও স্থিতিশীল হবে। তিনি আরও বলেছেন, ২২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দেশটির অভ্যন্তরীন মুদ্রাবাজারে ছাড়া হয়েছে।
এদিকে মুদ্রার দরপতনের পাশপাশি ইরানে তীব্র হয়ে উঠেছে বিদ্যুৎ সংকট। গত গ্রীষ্ম থেকে ইরানজুড়ে লোডশেডিংয়ের সমস্যা শুরু হয়েছে এবং শীতে এ সংকট রীতিমতো ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তীব্র শীত, লোডশেডিং, তুষারপাত ও বায়ুদূষণের জেরে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে সম্প্রতি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি দপ্তর বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে ইরানের সরকার।
অথচ ইরান জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশটির ভূগর্ভে এখনও বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মজুত রয়েছে; কিন্তু শীতকালের হিমঠান্ডা এবং গ্রীষ্মকালীণ দাবদাহের সময় যখন দেশজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে, তখন তা মেটাতে পারে না দেশটি।
কারণ বছরের পর বছর ধরে ইরানের জ্বালানি খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নেই। পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে; ফলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটে ভুগছে দেশটি।
২০১৫ সালে ইরান যখন বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার নিয়ে জ্যাকোপা চুক্তি করেছিল, সে সময় ইরানের মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে পাওয়া যেত ৩২ হাজার রিয়াল। ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই যে দিন সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান শপথ গ্রহণ করেন এবং দায়িত্ব নেন, সেদিন ইরানের মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৫ লাখ ৮৪ হাজার রিয়াল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথম দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি জ্যাকোপা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। ২০১৮ সালের ওই পদক্ষেপের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যা এখনও চলছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অবশ্য ইতিমধ্যে বেশ এগিয়ে গেছে। কিন্তু এই নিয়ে যে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেশটির ওপর আরোপ করা হয়েছে, তা অর্থনীতিকে রীতিমতো পঙ্গু করে দিয়েছে। তারপরও ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে এবং এখন অস্ত্র তৈরি করার মতো উন্নতমানের ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধ করছে ।
গত মে মাসে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার লক্ষ্যে নতুন একটি চুক্তি করা হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের মধ্যে উত্তেজনা এখনো বিরাজমান। প্রায় ৪৫ বছর আগে ১৯৭৯ সালে তেহরানে মার্কিন দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণ দখলের পর ৪৪৪ দিনব্যাপী জিম্মি সংকটের জন্ম হয়েছিল। সেই বিপ্লবের আগে ইরানি রিয়াল এখনকার তুলনায় বেশ শক্তিশালী ছিল। প্রতি ডলারে তখন ৭০ রিয়াল পাওয়া যেত।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এখন যে সংঘাত, তাতে গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে ইরান। পুরো অঞ্চল এই সংঘাতে ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। তেহরান যাকে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষ হিসেবে বর্ণনা করে, সেই মিত্ররা আজ রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী ও যোদ্ধার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।
সূত্র : ইউরো নিউজ
এসএমডব্লিউ