বিশ্বের অভিজাত ‘হাজার কোটির ক্লাব’ থেকে ঝরে পড়লেন আম্বানি-আদানি
ভারতের দুই শীর্ষ ধনকুবের মুকেশ আম্বানি এবং গৌতম আদানি বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকা ‘এক হাজার কোটি ডলার ক্লাব’ থেকে ‘ঝরে পড়েছেন’। সোমবার এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
কোনো ধনকুবের যদি এক হাজার কোটির ক্লাব বা ‘১০০ বিলিয়ন ডলার ক্লাব’ তালিকায় নিজের নাম ওঠাতে চান, সেক্ষেত্রে তার অবশ্যই ন্যূনতম এক হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ থাকা জরুরি। মুকেশ আম্বানি এবং গৌতম আদানি উভয়ই বৈশ্বিক এই তালিকায় নিজেদের নাম উঠিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। দীর্ঘদিন তারা নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষমও হয়েছিলেন।
গত জুলাই মাসেই মহা ধুমধাম করে নিজের ছোটো ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়ে দিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। বৈশ্বিক তারকাদের উপস্থিতিতে জাঁকজমকপূর্ণ সেই বিয়েতে মুকেশের ব্যয় হয়েছে ৬০ কোটি ডলার। টানা কয়েকদিন ভারত এবং বিশ্বের অনেক সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের তালিকায় ছিল অনন্ত আম্বানি-রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান। তার মাত্র ৬ মাসের মাথায় পতন ঘটল আম্বানির। ব্লুমবার্গের পর্যবেক্ষণ বলছে, জুলাই মাসে মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২ হাাজর ৮০ কোটি ডলার; আর বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৯ হাজার ৬৭০ কোটি ডলারে।
অবশ্য পুত্রের বিয়েতে ব্যয়ের কারণেই যে মুকেশ আম্বানির সম্পদ কমে গেছে— ব্যাপারটি এমন নয়। তার সম্পদ কমার মূল কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং আর্থিক ঋণ। মুকেশ আম্বানির মূল ব্যবসায়িক খাত হলো ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে তা পরিশোধন করে বিক্রি করা। গত ছয় মাসে এ দু’ই খাতেই নতুন বিনিয়োগকারীদের আগমন ঘটেছে এবং এর জেরে মুকেশের মুনাফা কমে গেছে। নিজের ব্যবসা স্থিতিশীল রাখতে গত ছয় মাসে বিপুল পরিমাণ ঋণও গ্রহণ করেছে তিনি।
গৌতম আদানির বিষয়টি অবশ্য সাম্প্রতিক। ঘুষ-প্রতারণার দায়ে গত ২১ নভেম্বর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা হয়েছে ভারতের অপর ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। এরপর থেকেই শেয়ার বাজারে কমতে শুরু করেছে আদানি গ্রুপভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক চুক্তি হাতছাড়া হয়েছে তার অনেক বিনিয়োগকারীও আদানি গ্রুপ থেকে নিজেদের পুঁজি তুলে নিচ্ছেন।
আদানি অবশ্য ঘুষ-প্রতারণার অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ‘মিথ্যা মামলা ও অন্যায্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা’র বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন; তবে তাতে সম্পদের ক্ষয় ঠেকানো যাচ্ছে না।
ব্লুমবার্গের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত জুন মাসে গৌতম আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। বর্তমানে তা নেমেছে ৮ হাজার ২১০ কোটি ডলারে।
ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও থিঙ্কট্যাংক সংস্থা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট ক্যালকাটার অধ্যাপক ভি.কে উন্নি ব্লুমবার্গকে বলেন, “যে সম্পদ তারা হারিয়েছেন, তা ফিরে পাওয়া তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করবেন। এটি বাস্তবায়িত হলে সামনের দিনগুলোতে তাদের মুনাফা কমে যাবে।”
সূত্র : ব্লুমবার্গ
এসএমডব্লিউ