বিহারের ঘটনাকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ভুয়া দাবিতে প্রচার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার গিরিপুর এলাকায় একটি হিন্দু পরিবারের ওপর জামায়াতের কর্মীরা হামলা করেছেন। ভিডিওতে এক নারী ও তিন শিশুর মৃতদেহ দেখা যায়। এতে দাবি করা হয়, হামলাকারীরা হিন্দু নারীদের ধর্ষণও করেছেন। ভিডিওটি ভারতের কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন; যা ভাইরাল হয়েছে।
তবে আসলেই ভিডিওটি ময়মনসিংহের কি না, সেই বিষয়ে ফ্যাক্ট চেক করেছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ভারতীয় ফ্যাক্ট চেক সংস্থা লজিক্যালি ফ্যাক্টস। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত সহিংসতা নিয়ে যখন প্রতিবেশী দুই দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে, সেই সময় এই ভিডিওটি ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে শেয়ার করছেন। ভিডিওটি নিয়ে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভিডিওটি পোস্ট করে একজন লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গিরিপুরে জিহাদিরা হিন্দু এলাকার বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। কিছু বাড়িতে হিন্দু নারী ও শিশুদের ধর্ষণ এবং হত্যা করেছে।’’ একই দাবিতে ফেসবুকেও ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের পূর্ণিয়া জেলার কিলপাড়া গ্রামের। গত নভেম্বর মাসে ওই গ্রামের এক নারী তার তিন সন্তানকে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেন।
• ঘটনা আসলে কী?
ভাইরাল ভিডিওটির কি-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, গত ৭ নভেম্বর একই ধরনের একটি ভিডিও সিটি হালচাল নিউজ ও বিসি টোয়েন্টি ফোর নামের দু’টি ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছিল। উভয় চ্যানেলের ভিডিওতে বলা হয়, বিহারের পূর্ণিয়া জেলার কিলপাড়া গ্রামে স্বামীর সঙ্গে বিবাদের জেড়ে এক নারী তিন সন্তানকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন।
ভিডিওতে নিহত নারীর সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে। তার স্বামীর নাম রবী শর্মা। এই ভিডিওর কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশটির অন্যান্য কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও ওই ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। গত ৬ নভেম্বর ভারতীয় দৈনিক জাগরণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ণিয়া জেলার রাওতা থানায় ২৬ বছর বয়সী এক নারী—তার এক কন্যা ও দুই ছেলে শিশুকে—হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম টিভি নাইন ওই নারীর স্বামী রবী শর্মার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। সেখানে রবী শর্মা বলেছেন, ‘‘তিনি স্থানীয় একটি মন্দিরের সভা থেকে বাড়ি ফিরে ঘটনাস্থলেই তার স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত দেখতে পান।’’ এই ঘটনার সংবাদ পরিবেশন করেছে দেশটির দৈনিক ভাস্কর, নবভারত টাইমস এবং নিউজ১৮-সহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম।
— Khabar Seemanchal | (@khabarsemanchal) November 6, 2024
ভারতীয় ফ্যাক্ট চেক সংস্থা লজিক্যালি ফ্যাক্টস টিভি নাইনের প্রতিনিধি মোহিত পন্ডিত ও দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদক আকাশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের কাছে ভিডিওটি শেয়ার করে জানতে চাওয়া হলে উভয়ই নিশ্চিত করেছেন, বিহারের কিলপাড়া গ্রামের ঘটনার দৃশ্য সেটি।
এছাড়া রাওতা থানার পুলিশ কর্মকর্তা জ্ঞান রঞ্জন বলেছেন, ‘‘এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা।’’ মুগরা পিয়াজি পঞ্চায়েতের স্থানীয় বাসিন্দাও নিশ্চিত করেছেন, ভিডিওটিতে কিলপাড়া গ্রামের ঘটনা দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
• সত্য কী?
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে হিন্দুদের ওপর হামলার ভুয়া দাবিতে শেয়ার করা ভিডিওটি আসলে ভারতের বিহার রাজ্যের। সেখানে পারিবারিক কলহের কারণে তিন সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন এক নারী। সেই ঘটনার ভিডিও বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার বলে মিথ্যা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে।
এসএস