গ্রিসের শ্রমবাজারে ঘাটতি মেটাতে তিন লাখ অভিবাসী কর্মী প্রয়োজন
পর্যটন ও নির্মাণ খাতসহ গ্রিসের শ্রমবাজারে ঘাটতি মেটাতে মোট তিন লাখ বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দেশটির অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নিয়োগকর্তারা বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে বেগ পোহাচ্ছেন বলে জানিয়েছে নিয়োগকারী সংস্থাগুলো।
গ্রিসে কর্মী সংকট তীব্র হয়েছে এমন খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম পর্যটন। এ খাতে ডিশওয়াশার, ওয়েটার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পাচক বা শেফ, স্পা থেরাপিস্ট এবং ফ্রন্ট অফিসে কাজ করতে ইচ্ছুক এমন বিপুলসংখ্যক কর্মী দরকার।
অপরদিকে, নির্মাণ খাতে বিশেষ কারিগর, যেমন ওয়েল্ডার, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, স্টিমফিটার, গাড়ি চালক, সাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং বিশেষায়িত ভারী যন্ত্রপাতি চালাতে পারে এমন অপারেটরসহ প্রচুর কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়া গ্রিক ব্যবসায়ীরা শিল্প উৎপাদন, স্টোরেজ সুবিধা, প্যাকেজিং, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, সিএনসি (কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল) মেশিনারি টেকনিশিয়ান এবং অটোক্যাড ডিজাইনারদের মতো পেশাদার কর্মীদের খুঁজছে।
এসব খাত ছাড়াও আইটি খাতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার এবং সিস্টেম সুরক্ষা বিশেষজ্ঞসহ বিশেষায়িত প্রোগ্রামারদের চাহিদা রয়েছে। তবে কর্মী সংকটে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী গ্রিসের কৃষিখাত। খামার শ্রমিকদের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই মোকাবিলা করছেন কৃষি মালিকেরা।
শ্রমিক ঘাটতি থাকলেও ইউরোপের বাইরের দেশগুলো থেকে গ্রিসে বিদেশি কর্মীদের আনার প্রক্রিয়া ছয় থেকে ৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পর্যাপ্ত মৌসুমী কর্মী পাওয়া কঠিন করে তোলে।
সরকার হাজার হাজার অভিবাসীদের আনতে অনুমোদন দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত অল্পসংখ্যক ব্যক্তি গ্রিসে আসতে সক্ষম হন। গ্রিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিকের চাহিদা ও যোগান নিয়ে কাজ করা প্রথম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কগ্রিস ডটআইওর সিইও বেঙালিস কানেল্লোপৌলস গ্রিক দৈনিক কাথিমেরিনিকে বলেন, প্রায় দুই হাজার ছোট ও বৃহৎ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্রিসে বিদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ওয়ার্কগ্রিস ডটআইও প্লাটফর্মের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ, মিসর, জর্জিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মলডোভা, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন্স এবং ভিয়েতনামসহ ১১টি দেশের ৩৫ হাজারেরও বেশি সম্ভাব্য অভিবাসী কর্মী গ্রিসে আসতে আগ্রহ দেখিয়ে নিবন্ধন করেছেন।
বেঙালিস কানেল্লোপৌলস বলেন, একজন বিদেশি কর্মীর সফল নিয়োগ অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। একটি মন্ত্রণালয়ের ডিক্রি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা এবং বিশেষীকরণ নিয়ে স্থানীয় ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দিতে হয়। বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এছাড়া বিদেশে অবস্থিত গ্রিক দূতাবাসগুলো থেকে ভিসা অনুমোদন এবং ইস্যুর বিষয়টিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। পরবর্তীতে তারা গ্রিসে আসার পর ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, একটি সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর এবং বেস কিছু প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
বেঙালিস কানেল্লোপৌলস বলেন, ভিসা প্রদানে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের আবেদনের সিদ্ধান্ত, দূতাবাস থেকে অনুমোদন এবং বিশেষায়িত পারমিটের সংখ্যা যেভাবে নির্ধারণ করা হয়, তা নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। বিদেশি কর্মীরা গ্রিসে আসার পর সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড ও অন্যান্য প্রশাসনিক নথি ইস্যুতে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আইন অনুসারে এই সময়কালে কর্মীরা কাজ করতে পারেন না।
নিয়োগকর্তাদের মতে, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শ্রমিকদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশে রাষ্ট্রস্বীকৃত সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আসতে হবে, যাতে করে অবিশ্বাস না থাকে। এমন সম্পৃক্ততা কর্মচারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। ইনফোমাইগ্রেন্টস।
এসএস