ভারতে মন্দিরের খোঁজে মসজিদ ভেঙে ফেলার চেষ্টা চলছে : মেহবুবা মুফতি
ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ বেশ পুরোনো। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি অতীতে বহুবারই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ধরনের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে।
আর এবার ভারতে মুসলিমদের দুর্দশা নিয়ে সরব হয়েছেন ভারতশাসিত কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি বলেছেন, ভারতে মন্দিরের সন্ধানে মসজিদ ভেঙে ফেলার চেষ্টা চলছে। ১৯৪৭ সালে যে অবস্থা ছিল, আমাদের সেই দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
রোববার (১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) প্রধান মেহবুবা মুফতি জম্মুতে সাংবাদিকদের বলেন, “...আজ আমি ভয় পাচ্ছি, ১৯৪৭ সালে যে পরিস্থিতি ছিল, আমাদের সেই দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তরুণরা চাকরির কথা বললেও তারা তা পাচ্ছে না। আমাদের ভালো হাসপাতাল, শিক্ষা নেই। তারা রাস্তার অবস্থার কোনও উন্নতি করছে না কিন্তু মন্দিরের সন্ধানে মসজিদ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে।”
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের সামভালে মুঘল আমলের একটি প্রাচীন মসজিদে ‘সার্ভে’ বা সমীক্ষা করানোর নির্দেশকে ঘিরে স্থানীয় জনতা ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় তীব্র সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
ঘটনার পর গোটা এলাকায় তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। শহরের যে মসজিদটিকে ঘিরে এই বিরোধ দেখা দিয়েছে সেটি ‘শাহী জামা মসজিদ’ নামে পরিচিত। কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর দাবি, প্রাচীন একটি হিন্দু মন্দির ভেঙেই এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল, ওই ভবনের স্থাপত্যে নাকি এখনও তার প্রমাণ রয়েছে।
আরও পড়ুন
মেহবুবা মুফতি রাজস্থানের আজমীরে অবস্থিত বিখ্যাত সুফি সাধক মঈনুদ্দিন চিশতির দরগাহ নিয়েও একই ধরনের বিতর্ক তুলে ধরেন। মূলত আজমীর শরিফের নিচে মন্দির আছে এমন দাবি করে আদালতে পিটিশন দায়ের করেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সেনা। গত সেপ্টেম্বরে এই পিটিশন দায়ের করার পর আজমীরের একটি আদালত দাবিটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে দায়ের করা ওই পিটিশনে আদালতকে আবার আজমীর শরিফে পূজা করার অনুমতি দিতেও বলা হয়েছে।
কাশ্মিরের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজমীর শরিফে সকল ধর্মের লোকেরা প্রার্থনা করে এবং এটি ভ্রাতৃত্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এখন তারা সেখানে মন্দিরের সন্ধান পেতে খনন করার চেষ্টা করছে।”
এসময় মেহবুবা মুফতি সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ নিয়েও মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তিত্ব। ২০২৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে মুসলিমসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
আরও পড়ুন
মোদির সেই সফরের মধ্যেই ভারত নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি সেসময় বলেছিলেন, মুসলিমদের অধিকারকে সম্মান না করলে ভারত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।
মূলত ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ভিন্নমতাবলম্বী এবং সাংবাদিকদের নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত অভিযোগ সামনে এনেছে বহু মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এমনকি মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠিও লিখেছেন ৭৫ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা।
উল্লেখ্য, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত প্রতিবেদনে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত বছর ভারতে মুসলমান, হিন্দু দলিত, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এছাড়া ভারতীয় সাংবাদিকদের ওপর ভারত সরকারের নির্যাতনের বিষয়টিও সামনে আনা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে।
টিএম