পাকিস্তান : ‘বিক্ষোভ প্রত্যাহার কেন’, প্রশ্ন পিটিআইয়ের ভেতরে
অবিলম্বে ইমরান খানের মুক্তিসহ আরও দুই দাবিতে চলমান ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কর্মসূচি হঠাৎ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে। দলের এ সিদ্ধান্তে অনেকে হতাশাও প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের সাবেক সাংবাদিক এবং বর্তমানে পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা শওকত আলী ইউসুফজাই বুধবার জিও টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দলের এই অবস্থা তুলে ধরে বলেছেন, বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পিটিআইয়ের হাইকমান্ড দলকে যথাযথভাবে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরান খানের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে গত ২৪ নভেম্বর ইসলাসাবাদ অভিমুখে রওনা দেন পিটিআইয়ের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। মঙ্গলবার তারা ইসলামাবাদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ডি-চকে এসে পৌঁছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করেন।
সেখানে পুলিশ ও পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী রেঞ্জার্সের সংঘাত শুরু হয় তাদের। এতে পুলিশ-রেঞ্জার্স এবং পিটিআইয়ের মোট ৬ জন নিহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্য আগে থেকেই রাজধানীতে সেনা মোতায়েন করেছিল সরকার। পিটিআইয়ের যে কোনো কর্মী-সমর্থককে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তবে সেনা বাহিনী গুলি চালিয়েছে— এমন সংবাদ পাওয়া যায়নি।
তবে ইসলামাবাদের রেড জোন এবং ডি চকে পৌঁছানোর পর পুলিশ, রেঞ্জার্স এবং সেনা সদস্যদের হাতে ব্যাপক ধরপাকড়ের শিকার হন পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা। এই ধরপাকড়ের এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান এই আন্দোলন কর্মসূচির শীর্ষ দুই নেতা খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপোর এবং ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি।
পরে রাতে এক বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের রাজনৈতিক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ জানান, ইসলামাবাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে পিটিআইয়ের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
তারপরই বিক্ষোভ-কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে বিবৃতি দেয় পিটিআইয়ের মিডিয়া সেল। সেখানে বলা হয়, “নিষ্ঠুর-নির্মম মনোভাব এবং নিরস্ত্র জনগণকে হত্যার মাধ্যমে রাজধানীকে কসাইখানা বানানোর যে পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগোচ্ছে, তার জেরেই আমরা সাময়িকভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি।”
জিও টিভিকে শওকত ইউসুফজাই বলেন, বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আলী আমিন গান্দাপোর ব্যাতীত সেভাবে আর কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার উপস্থিতি দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল করার জন্য হাইকমান্ডের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে— এমনও মনে হয়নি তার।
“পিটিআইয়ের কর্মসূচি ঘোষণার পর ডি চক এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে সরকার ব্যাপক জোরদার করবে— এটি জানা কথা। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে কর্মসূচিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল, যা হাইকমান্ড নেয়নি।”
“এছাড়া দলের মল নেতা যারা, অর্থাৎ গওহর আলী খান, সালমান আকরাম রাজা, শের আফজাল মারওয়াত— কাউকে এ কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। সরকার পিটিআইকে আলোচনার জন্য ডেকেছিল; কিন্তু কী কারনে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো, তা আমি এখনও জানি না।”
সূত্র : জিও নিউজ
এসএমডব্লিউ