পশ্চিমা দেশগুলোতে হামলার ইঙ্গিত পুতিনের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাতে ‘‘বৈশ্বিক যুদ্ধের’’ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে মস্কোর হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই হুমকি দিয়েছেন পুতিন।
গত মঙ্গলবার পশ্চিমাদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় একাধিক বার হামলা চালায় ইউক্রেন। এর জবাবে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে নতুন প্রজন্মের মাঝপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে রাশিয়া। এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার হামলাকে ‘‘উন্মাদ প্রতিবেশীর’’ যুদ্ধের নৃশংসতার বড় ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে কিয়েভের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘‘প্রতি মুহূর্তের সংঘাত বৃদ্ধির জন্য রাশিয়া দায়ী।’’
রাশিয়া ইউক্রেনে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করেছে; সেটি মাঝপাল্লার। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে; যা পুতিনের পশ্চিমে আঘাত হানার হুমকির জন্য যথেষ্ট। জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের মিত্রদের কটাক্ষ করে বলেছেন, কিয়েভকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য পশ্চিমা সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক দিনে ইউক্রেন প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিক্ষেপ করেছে। এর ফলে প্রায় তিন বছর ধরে চলা দীর্ঘ সংঘাতে আকাশচুম্বী উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
পুতিন বলেছেন, ‘‘আমরা সেসব দেশের সামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকারী মনে করি, যারা তাদের অস্ত্রকে আমাদের স্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার অনুমতি দেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ও ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মস্কোর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে। শত্রুরা স্পষ্টতই যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তা অর্জন করতে পারেনি।’’
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অবশ্য বলেছেন, পারমাণবিক উত্তেজনা নিরসনের জন্য চালু করা একটি স্বয়ংক্রিয় হটলাইনের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আধা ঘণ্টা আগে ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিল মস্কো।
এর আগে তিনি বলেছিলেন, পারমাণবিক সংঘাত এড়াতে সম্ভাব্য সবকিছু করছে রাশিয়া। তবে চলতি এই সপ্তাহে রাশিয়ার পারমাণবিক মতবাদ হালনাগাদ করা হয়েছে।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়েরে সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রতিক্রিয়া হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব পারমাণবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি ওয়াশিংটন। ন্যাটোর মুখপাত্র ফারাহ দাখলাল্লাহ বলেছেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার ‘‘সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তন কিংবা মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা জোটকে কিয়েভের প্রতি সমর্থন করা থেকে বিরত রাখবে না।’’
• বেপরোয়া আচরণ
এর আগে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাশিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করে ইউক্রেন। যদিও ইউক্রেনের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ওয়াশিংটন।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, মস্কো দিনিপ্রো অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করেছে। সেখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাশিয়ার ছোড়া আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিনিপ্রোর একটি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। এতে দুই বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
পুতিন বলেছেন, যুদ্ধের মাঝে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়া নতুন প্রজন্মের ‘‘ওরেশনিক’’ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বৈশ্বিক সমালোচনা শুরু হয়েছে। কিয়েভের মিত্ররা বলেছেন, রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রমাণ করে যে, মস্কো কোনোভাবেই শান্তি চায় না। ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পশ্চিমা অন্যান্য দেশও পুতিনের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘‘রাশিয়াকে সত্যিকারের শান্তির জন্য আহ্বান জানানো প্রয়োজন; যা কেবল বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যথায়, রাশিয়ার ক্রমাগত হামলা, হুমকি এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি চলতেই থাকবে। আর এটা কেবল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, বরং পশ্চিমা সবার জন্য হুমকি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘এটি রাশিয়ার বেপরোয়া আচরণের আরেকটি উদাহরণ।’’ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, রাশিয়ার নতুন ধাঁচের ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার আরেকটি উদ্বেগজনক এবং দুঃখজনক ঘটনা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ‘‘ভুল পথে যাচ্ছে’’ বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
তবে রাশিয়ার এই হুমকিকে উড়িয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, রাশিয়া সম্ভবত এই ধরনের পরীক্ষামূলক কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী।
সূত্র: এএফপি।
এসএস