আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কী, কতদূরে আঘাত হানতে পারে
ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহর লক্ষ্য করে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) ছুড়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম ইউক্রেনস্কা প্রাভদা বলেছে, দিনিপ্রো শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রটি আরএস-২৬ রুবেজ সিরিজের।
প্রতিরক্ষা সূত্র অনুযায়ী, ইউক্রেনে ছোড়া রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রটি আরএস-২৬ রুবেজ ছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারা বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রের প্রাপ্ত ছবির ওপর ভিত্তি করে এর যথাযথ মূল্যায়ন করা কঠিন।
• ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও আরএস-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক...
○ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মূলত রকেট-চালিত। স্ব-চালিত এই অস্ত্র মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ব্যবহার করে সরাসরি লক্ষ্যে আঘাত হানে।
○ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটারেরও (৩ হাজার ৪২০ মাইল) বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
○ মার্কিন থিঙ্কট্যাংক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যকার পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস চুক্তি নিউ স্টার্ট অনুযায়ী, আর-২৬ ক্ষেপণাস্ত্রকে আইসিবিএম হিসেবে মনে করা হলেও এটি মাঝপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শেণিতে পড়ে। সাড়ে ৫ হাজারের কিলোমিটারের কম দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারী অস্ত্র বহন করতে পারে।
• তড়িৎগতির ফ্লাইট
○ আইসিবিএম-সহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ডিপ্রেসড মোডে নিক্ষেপ করা যায়। এর অর্থ এই মোডে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র মহাকাশে প্রবেশ করে না এবং এর গতিপথ বায়ুমণ্ডলের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি বায়ুমণ্ডলে থাকাকালীন জ্বালানির বেশি ব্যবহার করায় পরিসীমার হ্রাস ঘটে।
○ প্রতি সেকেন্ডে কয়েক কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে আইসিবিএম। সামরিক সূত্র অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে যদি কোনও আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে এই ক্ষেপণাস্ত্রের সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট।
রাশিয়ার অ্যাস্ত্রাখান অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরের দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটারেরও বেশি। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, বৃহস্পতিবার রাশিয়া থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি দিনিপ্রো শহরে পৌঁছাতে মোট ১০ মিনিট সময় লেগেছে।
• ২০১২ সালে প্রথম সফল পরীক্ষা চালায় রাশিয়া
○ পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনের সক্ষমতা রেখে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নকশা প্রস্তুত করা হয়। যদিও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে যেকোনও ধরনের পেলোড বহন করতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক অস্ত্র বহন করেছে কি না, সেই বিষয়ে কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
○ যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সংস্থা আর্মস কন্ট্রোল এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, আরএস-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
○ সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বলেছে, ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো আরএস-২৬ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। এর দৈর্ঘ্য ১২ মিটার এবং ওজন ৩৬ টন। ৮০০ কেজি ওজনের একটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রবেশ ঘটেনি বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস