নেতানিয়াহু নিজের ব্যক্তিগত লাভের জন্য যুদ্ধ জারি রেখেছেন
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ফায়দার জন্য গাজা ও লেবাননে যুদ্ধ জারি রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ইসরায়েল জিভ।
রোববার ইসরায়েলের সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জিভ আরও বলেছেন যে নেতানিয়াহুর এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলার কারণেই মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্তকে।
সাক্ষাৎকারে ইসরায়েল জিভ বলেন, “গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযানের প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষ্য ছিল হামাসের হাতে থাকা জঙ্গিদের মুক্ত করা। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা বুঝলাম, জিম্মিদের মুক্ত করা এই যুদ্ধের অগ্রাধিকার নয়।”
“শুরু থেকেই যুদ্ধের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন নেতানিয়াহু। মূলত তার নির্দেশনার কারণেই একসময় জিম্মিদের মুক্ত করার প্রাথমিক লক্ষ্য গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ফায়দাকে অগ্রাধিকার দিয়ে যুদ্ধের নির্দেশনা দিতে থাকেন। ইয়োয়াভ গ্যালান্ত (ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী) এই নিয়ে আপত্তি তোলার কারণে তাকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে।”
সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশটির নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথি চুরি হয়েছে। এ চুরির দায়ে প্রাথমিকভাবে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে নেতানিয়াহুর একজন সহকারীও রয়েছেন।
চ্যানেল ১২-কে এ প্রসঙ্গে ইসরায়েল জিভ বলেন, “নেতানিয়াহু নিজে মিথ্যে দিয়ে পরিবৃত। তার মধ্যে সত্যতার কোনো স্থান নেই। তার সহকারীরাও যে তার মতোই হবে— এটা স্বাভাবিক।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৪২জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায়। হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বার বার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জনানো হলেও তা উপেক্ষা করে এখনও গাজায় অভিযান জারি রেখেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। সে অভিযানে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে ৪৩ হাজার ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ।
এছাড়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের জেরে গাজায় খাদ্য, সুপেয় পানি এবং ওষুধের ভয়াবহ সংকট চলছে। গাজায় বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার— ৩ দেশ। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অভিযানে বিরতি দিতে রাজি না হওয়ায় সেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
গাজায় নির্মম অভিযানের জেরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গণহত্যা মামলা দায়ের হয়েছে জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে)।
সূত্র : মিডলইস্ট মনিটর
এসএমডব্লিউ