জয়-পরাজয় নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকায় যেসব ইস্যু
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে আর কয়েক ঘণ্টা পর। নির্বাচনে দেশটির প্রধান দুই দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যথাক্রমে কমালা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দুজনই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরিচিত। ৬০ বছর বয়সী কমালা হ্যারিস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাজ্যের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের অধিকাংশই ডেমোক্রেটিক কিংবা রিপাবলিক পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষ হওয়ার আগেই বলে দেওয়া যায় যে কোন রাজ্যে কোন দলের প্রার্থী জিতবে।
ব্যতিক্রম শুধু পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন ও নেভাডা— এই সাতটি অঙ্গরাজ্য। এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটের ফলাফলই নির্ধারণ করে দেয় যে কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এ কারণে এই রাজ্যগুলোকে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্যও বলা হয়।
মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করবে আসলে ৫টি ইস্যু। এই ইস্যুগুলো হলো—
অর্থনীতি
২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যে চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প, সে সময় ব্যবসায়ী এবং ধনীব্যক্তিদের করের হার হ্রাস করেছিলেন তিনি। এবার বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণা সভায় তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্প বৃদ্ধি করবেন তিনি। তার যুক্তি— এতে সাধারণ মার্কিন ভোটারদের ওপর করের বোঝা কমবে।
অন্যদিকে কমালা হ্যারিস জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে মধ্যবিত্তবান্ধব অর্থনীতি গড়ে তুলবেন, যারা প্রথমবারের মতো বাড়ি কিনতে চান, তাদেরকে সহায়তা দেবেন, এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদেরও সহায়তা প্রদান করবেন।
অভিবাসন
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অভিবাসন এই মুহূর্তে একটি বড় ইস্যু। দেশটির নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভিবাসী ও অভিবাসনবিরোধী। তৃণমূল পর্যায়ের ভোটারদের মধ্যে এরাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় শক্তি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে মূলত এই ইস্যুর মাধ্যমেই ডেমোক্রেটিক পার্টির তৎকালীন প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেছিলেন ট্রাম্প। তারপর ২০২০ সালে জো বাইডেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়েও এটি ছিল ট্রাম্পের প্রধান অস্ত্র। যদিও সেবার হেরে গিয়েছিলেন তিনি; তবে বর্তমান প্রতিদ্বন্দ্বী কমালা হ্যারিসের বিরুদ্ধেও এই ইস্যুটিকে আগের মতোই গুরুত্ব দিচ্ছে ট্রাম্প।
অন্যদিকে নির্বাচনে কমালা হ্যারিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র অভিবাসীরা। অভিবাসীদের অনেকের কাছেও কমালা প্রিয় প্রার্থী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মনোভাবকে আমলে নিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির এই নেত্রী বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।
গর্ভপাত
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের মাধ্যমে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে এবং এ সংক্রান্ত ১৯৭৩ সালের আইন বাতিল করে। ওই আইনে গর্ভপাতকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের কট্টর সমর্থক এবং তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন— এবার নির্বাচনে গিয়ে ক্ষমতায় গেলে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল তো রাখবেনই, উপরন্তু যেসব ওষুধ সেবন করলে গর্ভপাত হয়, সেসবও যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করবেন।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট যখন এই আদেশ দেয়, সে সময়েই এ রায়র বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন বাইডেন। নির্বাচনী প্রচারণা সভায় কমালা জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে গর্ভপাতের অধিকার সমুন্নত রাখতে নতুন আইন প্রণয়ন করবেন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি
বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ক্ষমতায় গেলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। ইউক্রেনে মার্কিন অর্থ ও সামরিক সহায়তা প্রদানের তীব্র সমালোচক ট্রাম্প।
অন্যদিকে কমালা হ্যারিস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি ক্ষমতায় গেলে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহায়তা অব্যাহত থাকবে। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে অবশ্য ট্রাম্প এবং কমালা উভয়ই ইসরায়েলকে সমর্থন প্রদান অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের তুলনায় কমালা ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিদ্ধস্ত গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের প্রতি বেশি উদার।
জলবায়ু
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ চীন, তারপর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই প্রার্থীর কেউই অবশ্য এ ইস্যুতে তেমন দৃঢ় অবস্থানে নেই, বরং ট্রাম্পের অবস্থান অনেকটা নেতিবাচক। জলবায়ু ইস্যুতে ট্রাম্প বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বর্তমানে যেসব আলোচনা চলছে, সেগুলো এক ধরনের ধাপ্পাবাজি ছাড়া কিছু নয়। বর্তমান সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বৈদ্যুতিক যানবাহন খাতে যে ভর্তুকি দিচ্ছে, তিনি ক্ষমতায় এলে সেসব বন্ধ করে দেবেন বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
অন্যদিকে কমালা বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে জো বাইডেন যেসব নীতি নিয়েছেন, সেসব অব্যাহত রাখবেন।
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ