ট্রুডো খালিস্তানপন্থিদের ঘনিষ্ঠ, অভিযোগ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রাজনৈতিকভাবে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তান আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছেন দেশটির সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় কুমার ভার্মা। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, কানাডায় তিনি এবং ভারতীয় কূটনীতিকরা বিভিন্ন সময়ে হুমকি পেয়েছেন এবং ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন সরকারকে জানানোর পরও দেশটির সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বৃহস্পতিবার এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় কুমার ভার্মা বলেন, “কানাডার ভারতীয় কমিউনিটির নেতা ও কূটনীতিকদের লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাকেও দেওয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি হোলির সময় আমাকে দাঁড়কাক হিসেবে সাজিয়ে একটি পোস্টার প্রকাশ করেছে খালিস্তান সমর্থকরা, আমার কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। আরেকটি পোস্টারে দেখানো হয়েছে একদল লোক আমার দিকে বন্দুক তাক করে আছে। অর্থাৎ হুমকির নামে এমন এমন সব কাজ তারা করছে— যেগুলো কোনো ভদ্র সমাজে ঘটে না।”
“আমরা বেশ কয়েক বার কানাডার সরকারের কাছে এ ইস্যুতে অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু দেশটির সরকার এসব অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি।”
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গে সঞ্জয় বলেন, “কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমছে। এ কারণে এখন তিনি খালিস্তানপন্থিদের ওপর ভর দিয়ে এগোতে চাইছেন। এ পর্যন্ত ভারতের বিরুদ্ধে যতগুলো পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, সবগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনকি তার রাজনৈতিক দল ও সরকারে এমন বহু লোকজন রয়েছেন, যারা ভারতের প্রতি বৈরীভাবপান্ন।
খালিস্তান সংকট
‘খালিস্তান’ নামটি এসেছে পাঞ্জাবী ভাষার শব্দ ‘খালসা’ থেকে, যার অর্থ ‘পবিত্র’। তাই খালিস্তান শব্দটির আক্ষরিক বাংলা অনুবাদ ‘পবিত্র ভূমি’। ১৬৯৯ সালে শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগুরু গোবিন্দ সিং প্রথম শিখদের জন্য পৃথক একটি রাষ্ট্রের দাবি তোলেন। সেই রাষ্ট্রের নাম তিনি দেন খালিস্তান।
গোবিন্দ সিংয়ের প্রস্তাবিত সেই রাষ্ট্রের সীমানা ছিল ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে পাকিস্তানের লাহোর পর্যন্ত। অখণ্ড পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লি নিয়ে খালিস্তান গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
ব্রিটিশ শাসনামলে কংগ্রেস-মুসলিম লীগের পাশাপাশি শিখরাও খালিস্তানের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। সেই আন্দোলন সফল হয়নি। তবে গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে ভারতে তীব্র হয়ে ওঠে খালিস্তান আন্দোলন। এমনকি এই আন্দোলনের জেরে নিজের নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে ১৯৮৪ সালে খুন হতে হয় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে।
ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর নিজেদের ভূখণ্ডে এ আন্দোলনকে শক্তহাতে দমন করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে ভারতে থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে গিয়ে স্থায়ী হওয়া খালিস্তানপন্থি শিখরা আন্দোলন জারি রেখেছেন।
গত জুন মাসে ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের বৃহত্তম শহর ভ্যানকুভারের শহরতলী এলাকা সারেতে একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কানাডার খালিস্তানপন্থি শিখদের সংগঠক ও আধ্যাত্মিক নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে দেশটিতে গিয়েছিলেন, পরে সেখানাকার নাগরিকত্বও অর্জন করেন।
ভারতের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিসের কানাডা শাখার সংগঠক ও নেতা হওয়ার কারণে নয়াদিল্লির একজন তালিকাভুক্ত ফেরার সন্ত্রাসী ছিলেন হরদীপ। দু’টি সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতকে সরাসরি দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দেওয়া এক ভাষণে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন। এ ঘটনাকে কানাডার সার্বভৌমত্বের জন্য তীব্র অবমাননাকর বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
তবে নয়াদিল্লি বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছে, জাস্টিন ট্রুডো কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রদর্শন করা ছাড়াই এ অভিযোগ তুলেছেন।
সূত্র : এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ