ইসরায়েল ফিলিস্তিন সংঘাতের অষ্টম দিনে নিহত ২০০ ছুঁইছুঁই
গাজা উপত্যকায় দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মধ্যকার সংঘাত গড়িয়েছে অষ্টম দিনে। দু’পক্ষের এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ১৯৭ জন ফিলিস্তিনির। নিহতদের মধ্যে ৫৮ জন শিশু ও ৩৪ জন নারী আছেন।
এর মধ্যে রোববার (১৬ মে) নিহত হয়েছেন ৪২ জন ফিলিস্তিনি, যাদের ১০ জনই শিশু। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত সাত দিন ধরে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর অব্যাহত গোলা বর্ষণে গাজার মূল শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক, বসতবাড়ি, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভবন, হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের অধিকাংশই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
সংঘাত অষ্টম দিনে গড়ালেও অবশ্য হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী— কোনো পক্ষের মধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার কোনো লক্ষণ বা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার রাত জুড়ে গাজার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ডজন গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। গোলার প্রচণ্ড শব্দের প্রতিধ্বনি গাজার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোনা গেছে রাতভর।
হামাসের তরফ থেকেও রকেট হামলা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে তার অধিকাংশই অকার্যকর করে দিয়েছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী।
তবে তারপরও কিছু রকেট আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েলে। দেশটির সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামাসের রকেট হামালায় এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের দুইজন শিশু।
এদিকে টানা সংঘাত, মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। রোববার এক বৈঠকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন— দুই দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘দু’পক্ষের কাছেই একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চায় নিরাপত্তা পরিষদ; আর তা হলো যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া।’
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রোববার মন্ত্রীসভার এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হামলা অব্যাহত রাখবে সামরিক বাহিনী।
ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতকারীদের অবৈধ দখলদারিত্ব ও স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন গাজা অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। তবে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তার সূত্রপাত ঘটে গত ০৯ মে।
ওই দিন ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) রাত। ০৯ মে রাতে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।
হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, যা এখনও চলছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।
এসএমডব্লিউ