লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর ইসরায়েলের হামলা
লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে দুইজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সদর দপ্তরে ইসরায়েলি বাহিনী গোলাবর্ষণ করলে এই ঘটনা ঘটে। এই হামলার ফলে ব্যাপক আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে পড়েছে ইসরায়েল।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লেবাননে নিজেদের সদর দপ্তরে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় জাতিসংঘের দুই শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। এই হামলার ফলে ইসরায়েল ব্যাপক আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে পড়েছে, বিশেষ করে ‘ব্লু হেলমেট’ মিশনের ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী বলেছে, নাকুরা শহরে তাদের কার্যালয়ের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আঘাত হানা হয়েছে এবং দুইজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইসরায়েল স্বীকার করেছে, তার বাহিনী ওই এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে। দেশটি দাবি করেছে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা জাতিসংঘের ওই পোস্টের কাছে তৎপরতা চালাচ্ছিল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে।
লেবাননে নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল) এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের কার্যালয় ও সংলগ্ন এলাকায় “বারবার আঘাত হানা হয়েছে।”
তারা বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পার্শ্ববর্তী একটি বাঙ্কারেও গুলি চালিয়েছে যেখানে শান্তিরক্ষীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই গোলাবর্ষণের ফলে একাধিক গাড়ি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তারা আরও বলেছে, বাঙ্কারের প্রবেশ পথে ইসরায়েলি ড্রোন উড়তে দেখা গেছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সৈন্য পাঠানোর কাজে অন্যতম প্রধান অবদানকারী দেশ ইতালি বলেছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড ‘যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে’। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা এই ঘটনায় “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
ইন্দোনেশিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হরি প্রাবোয়ো বলেছেন, এই ঘটনা “স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে কীভাবে ইসরায়েল নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে, দায়মুক্তির ঊর্ধ্বে এবং আমাদের শান্তির যৌথ মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে।”
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই ধরনের হামলায় তারা “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”। হোয়াইট হাউস বলেছে, “আমরা বুঝতে পারছি ইসরায়েল হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য ব্লু লাইনের কাছে টার্গেটেড অপারেশন চালাচ্ছে... তবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য তাদের হুমকি না হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।
স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা “ইউনিফিল সদর দপ্তরে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের তীব্র নিন্দা করছে”। ইউরোপের এই দেশটি এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন” বলেও অভিহিত করেছে।
আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, “ইউনিফিল সৈন্য বা অবকাঠামোর আশপাশে যে কোনও গুলিবর্ষণ বেপরোয়া কাজ এবং এগুলো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত”।
ইসরায়েল ১৯৭৮ সালে আক্রমণের পর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা তা তদারকি করতে ইউনিফিল গঠন করা হয়েছিল। ইউনিফিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১০ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী রয়েছেন।
আরও পড়ুন
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর জাতিসংঘ তাদের মিশন সম্প্রসারিত করে এবং সীমান্ত বরাবর তৈরি করা ‘বাফার জোনে’ টহলদারি করতে শান্তিরক্ষীদের অনুমতি দেওয়া হয়।
ইসরায়েলের অভিযোগ, ২০০৬ সালের যুদ্ধ বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা লঙ্ঘন করে সীমান্ত বরাবর সন্ত্রাসী অবকাঠামো নির্মাণ করছে হিজবুল্লাহ।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক প্রধান জাঁ-পিয়ের লাক্রোয়া গত সপ্তাহে বলেন, লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা তাদের অবস্থানে নিয়োজিত থাকবে।
মূলত হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরুর আগে ইসরায়েল কিছু এলাকা খালি করার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ইউনিফিল এই সিদ্ধান্ত নেয়।
টিএম