১০২ বছরের বৃদ্ধ, ২ ঘণ্টার শিশু— গাজার বয়স্ক ও ছোট ভিকটিমের গল্প
দখলদার ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৩৪ হাজার ৩৪৪ জনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত এসব মানুষের তালিকা ঘেটে সবচেয়ে বয়স্ক ও সবচেয়ে ছোট ভিকটিমের নাম বের করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। সঙ্গে তুলে এনেছে তাদের গল্প।
আহমেদ আল-তাহওয়ারি
দখলদার ইসরায়েলের বর্বরতায় এখন পর্যন্ত যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে আহমেদ আল-তাহওয়ারি সবচেয়ে বয়স্ক। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ১০২ বছর।
তিনি ১৯২২ সালে আল-মাসমিয়াতে জন্মেছিলেন। যেই অঞ্চলটি এখন দখলদার ইসরায়েলের অবৈধ দখলে আছে।
১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েলের সৃষ্টি হয় তখন সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়। আল-মাসমিয়ার বাসিন্দারাও তখন নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়িতে তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে আসেন। তবে সেখানে তাদের আর কখনো ফেরা হয়নি।
যখন ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েলের সৃষ্টি হয় তখন আহমেদ আল-তাহওয়ারি ২৬ বছর বয়সী এক বিবাহিত যুবক ছিলেন। তার ছিল দুই সন্তান ও স্ত্রী। কিন্তু বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তার দুই ছেলে বাঁচেনি।
এরপর তিনি ও তার স্ত্রী মিলে গাজার বুরুজি শরণার্থী ক্যাম্পে নতুন করে জীবন শুরু করেন। নতুন বাড়ি তৈরি করেন এবং সবকিছু আবার গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাদের যে আসল বাড়ি ছিল সেই বাড়ির চাবি সবসময় দেওয়ালে ঝুলানো থাকত।
গত বছর যখন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হলো তখন শতবর্ষী এই বৃদ্ধ বুরুজি ক্যাম্পের নিজের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে চলে যান। কারণ তার বাড়িটির কাঠামো তেমন শক্ত ছিল না। কিন্তু তিনি যে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন সেটিতেও বিমান হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েল। এতে গুরুতর আহত হয়ে আটদিন বেঁচে থাকার পর বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়। তাকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানে চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণে বয়স্কদের রেখে তরুণদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
১০২ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ জীবনের শুরুতে ব্রিটিশ বাহিনীর রাঁধুনি হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর দর্জির কাজ করতেন। এতদিন বেঁচে থাকায় নাতির ঘরের নাতির মুখও তিনি দেখেছিলেন।
ওয়াদ ওয়ালিদ সামির আল-সাবাহ
ওয়াদ ওয়ালিদ সামির আল-সাবাহ দখলদার ইসরায়েলের হাতে প্রাণ হারানো সবচেয়ে কম বয়সী শিশু। গত ফেব্রুয়ারিতে তার বাড়ির পাশে বোমা ফেলে ইসরায়েলি সেনারা। ওই বোমার আঘাতে তার বাড়ির একটি অংশও ধসে পড়ে। এতে করে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে তার মা। ওই সময় তার জন্মও হয়নি।
হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে যখন তার মাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন তার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। ওই সময় দ্রুত সিজার করে ওয়াদ ওয়ালিদ সামির আল-সাবাহকে পৃথিবীর আলো দেখানো হয়। কিন্তু মাত্র দুই ঘণ্টা পরই তার মৃত্যু হয়। ইসরায়েলিদের ওই বর্বর হামলায় প্রাণ যায় তার মায়েরও। এরপর দুইজনকে একই কাফনে কবর দেওয়া হয়।
ছোট্ট এ শিশুটির চাচা ঈদ সাবাহ জানিয়েছেন, তার জন্য সবচেয়ে দুঃখের বিষয় ছিল তার ভাতিজার জন্ম ও মৃত্যু সনদ একই সময়ে দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এমটিআই