আল কায়দার শীর্ষে নেতৃত্বে এখন ওসামার পুত্র হামজা
সৌদি ধনকুবের এবং সাবেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ওসামা বিন লাদেনের প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আলকায়দা নেটওয়ার্কের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন তার এক ছেলে হামজা বিন লাদেন। বর্তমানে তিনি আফগানিস্তানে বসবাস করছেন এবং সেখান থেকেই গোষ্ঠীর সদস্যদের নির্দেশ-দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
আফগানিস্তানে হামজাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন ওসামার আরেক সন্তান আবদুল্লাহ বিন লাদেন। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থার এক্সক্লুসিভ একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির দৈনিক দ্য মিরর।
আফগানিস্তানের রয়েছে তালেবানবিরোধী সশস্ত্র সামরিক জোট ন্যাশনাল মোবিলাইজেশন ফ্রন্টও (এনএমএফ) এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এনএমএফের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, বর্তমানে হামজা, আব্দুল্লাহ এবং তাদের একান্ত বিশ্বস্ত লোকজন আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ পানশিরের দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাস করছেন। সেখানে তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ৪ শতাধিক স্নাইপার যোদ্ধা।
এনএমএফের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য দ্য মিররকে বলেন, “হামজা হচ্ছেন এই মুহূর্তে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের ‘ক্রাউন প্রিন্স’। তিনি, তার ভাই আবদুল্লাহ, তাদের পরিবারের সদস্য এবং আল কায়দার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য বর্তমানে পানশিরের দারা আবদুল্লাহ খেল জেলায় বসবাস করছেন। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বের রয়েছেন অন্তত ৪৫০ জন স্নাইপার যোদ্ধা। তারা যেখানে আছেন, সেখানে জঙ্গিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও আমরা জানতে পেরেছি।”
এনএমএফ জোটটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আফগানিস্তানের বিখ্যাত তালেবানবিরোধী নেতা আহমদ শাহ মাসুদ। ঘটনাচক্রে, এই জোটের সদরদপ্তর বা প্রধান ঘাঁটির অবস্থানও পানশিরেই।
এর আগে মার্কিন গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন হামজা। তবে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন সেই তথ্যকে খারিজ করে দিয়েছে।
১৯৮৮ সালে ওসামা বিন লাদেন, তার শীর্ষ সহযোগী আয়মান আল জাওয়াহিরি এবং সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুজাহিদ নেতাদের একাংশ প্রতিষ্ঠান করেন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল কায়দা। শুরু থেকেই গোষ্ঠীটির আমির বা প্রধান ছিলেন লাদেন। মতাদর্শিকভাবে এই গোষ্ঠীটি সুন্নি ইসলামের সালাফি ধারার অনুসারী। প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর গোষ্ঠীটির প্রধান ঘাঁটি ছিল সৌদি আরব।
সৌদির রাজপরিবারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ১৯৯৬ সালে আল কায়দাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সৌদির তৎকালীন সরকার। সেই সঙ্গে ওসামা বিন লাদেনকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তারপর সেখান থেকে সংগঠনের দপ্তর প্রথমে সুদান এবং তারপর আফগানিস্তানে সরিয়ে নেন লাদেন।
এই গোষ্ঠীটি প্রথম তার উপস্থিতি জানান দেয় ১৯৯৮ সালে; আফ্রিকার দুই দেশ কেনিয়া ও তানজানিয়ার মার্কিন দূতাবাসে হামলার মাধ্যমে। এই দুই হামলায় সর্বমোট ২২৮ জন নিহত হয়েছিলেন।
তবে আল কায়দার সবচেয়ে বড় নাশকতা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা। সাধারণভাবে ‘নাইন ইলেভেন’ বলে পরিচিত সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২ হাজার ৯৭৭ জন। হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন লাদেন।
ওই হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ লাদেন ও আল কায়দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন-ন্যাটো বাহিনী। তাদের সেই অভিযানে তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও লাদেন বেঁচে গিয়েছিলেন।
২০১১ সালের ২ মে মার্কিন বাহিনীর এক কমান্ডো হামলায় পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। তিনি নিহত হওয়ার পর গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতা হন লাদেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আয়মান আল জাওয়াহিরি। ২০২২ সালে ৩১ জুলাই তিনিও নিহত হন। নিজেদের তৈরি বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র ‘হেলফায়ার’ ছুড়ে তাকে হত্যা করেন মার্কিন সেনারা।
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাওয়াহিরি আল কায়দার আমির থাকাকালে তার প্রধান সহযোগী ছিলেন হামজা।
সূত্র : দ্য মিরর, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড
এসএমডব্লিউ