মণিপুরে ভয়াবহ সংঘাত : রাতে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুটের চেষ্টা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। রাজ্যটির জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলায় ড্রোন ও রকেট হামলার পাশাপাশি গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। এসব হামলা ও সহিংসতায় ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও।
এমন অবস্থার মধ্যেই মণিপুরে পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করার চেষ্টা হয়েছে। গভীর রাতে মণিপুর রাইফেলস ব্যাটালিয়নের দুটি অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুটের এই চেষ্টা চালানো হয়। তবে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার দাবি করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু দুষ্কৃতকারী ইম্ফল পূর্ব জেলায় মণিপুর রাইফেলস ব্যাটালিয়নের দুটি অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করার চেষ্টা চালিয়েছে বলে মণিপুর পুলিশ শনিবার জানিয়েছে। কিন্তু এই অবস্থানগুলোতে মোতায়েন থাকা সম্মিলিত নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ারগ্যাসের শেল এবং ফাঁকা গুলি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার বলেছেন, গত শুক্রবার রাতে কিছু দুষ্কৃতকারী ৭ম এবং ২য় মণিপুর রাইফেলস ব্যাটালিয়ন থেকে অস্ত্র লুট করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সম্মিলিত নিরাপত্তা বাহিনী সফলভাবে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মণিপুর পুলিশ বলেছে, ‘জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার সময়, দুর্বৃত্তদের কিছু গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। পরে যখন রিইনফোর্সমেন্ট পার্টি খাবেইসোইতে স্থাপিত ৭ম ব্যাটালিয়ন থেকে ফিরে আসছিল, তখন দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর গুলি চালালে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়।’
এতে আরও বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পুলিশ বলেছে, ‘আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য পুলিশ আবারও সকলের কাছে আবেদন করছে। এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত দুর্বৃত্তদের কঠোর আইনি পরিণতির পাশাপাশি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।’
এনডিটিভি বলছে, গত বছরের মে মাসে মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা শুরু হওয়ার পর সহিংস জনতা মণিপুর পুলিশের অস্ত্রাগার এবং জেলাজুড়ে অন্যান্য নিরাপত্তা পোস্ট থেকে চার হাজারেরও বেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং লক্ষাধিক গোলাবারুদ লুট করেছে।
নিরাপত্তা বাহিনী পরে অভিযান চালিয়ে লুট করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
এদিকে মণিপুরের জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলায় নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর শনিবার জিরিবামে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। জিরিবামের বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশনা দিয়েছেন, জরুরি অবস্থা চলাকালীন একসঙ্গে পাঁচজন বা তারও বেশি মানুষ জড়ো পারবেন না এবং সঙ্গে কেউ অস্ত্র বহন করতে পারবেন না। এছাড়া অনুমতি ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মণিপুরে নতুন করে শুরু হওয়া সহিংসতায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা। যেসব অস্ত্র বহন করা যাবে না তার মধ্যে রয়েছে পিস্তল, তলোয়ার, লাঠি, পাথর এবং যে কোনো ধারালো বস্তু।
আরও পড়ুন
এমনকি বিয়ে অনুষ্ঠান ও মরদেহের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া আয়োজনের ক্ষেত্রেও বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের এসপির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সরকারি অনুমতি ছাড়া এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না।
এর আগে, শুক্রবার মণিপুরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রকেট হামলায় একজনের প্রাণহানি ঘটে। এই ঘটনার পর রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ বলছে, বিষ্ণুপুর জেলায় রকেট হামলায় ৭২ বছর বয়সী ব্যক্তি এক নিহত ও অন্য পাঁচজন আহত হয়েছেন। এর ফলে সহিংসতায় বিধ্বস্ত মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল উপত্যকায় উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার অন্তত দুটি রকেট নিক্ষেপ করেছে বিদ্রোহীরা। এর মধ্যে বিষ্ণুপুরের ত্রংলাওবিতে একটি রকেটের আঘাতে দুটি অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। আর ময়রাং শহরে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মাইরেম্বাম কোইরেংয়ের বাসভবনের কাছে আঘাত হেনেছে দ্বিতীয়টি।
টিএম