ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করল যুক্তরাজ্য
টানা প্রায় ১১ মাস ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। চলমান এই সংঘাতে অনেকটা সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
দেশটি ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি করছে এবং এ নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়েছে তারা। এমন অবস্থায় ইসরায়েলে কিছু অস্ত্রের রপ্তানি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। তাদের এসব অস্ত্র-সরঞ্জাম আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হতে পারে, এমন ঝুঁকি থাকায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের কাছে কিছু অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেছে। দেশটি বলেছে, এই সরঞ্জামগুলো আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে বলে ‘‘স্পষ্ট ঝুঁকি’’ রয়েছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ইসরায়েলে ৩৫০ ধরনের অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্সের মধ্যে ৩০টির লাইসেন্স স্থগিত করবে যুক্তরাজ্য। এতে যেসব যন্ত্রপাতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে তার মধ্যে ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার এবং ড্রোনের যন্ত্রাংশও রয়েছে।
ল্যামি বলেন, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে চলেছে এবং তাদের এই সিদ্ধান্ত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার সমান কিছু নয়।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, তিনি যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপে ‘‘গভীরভাবে হতাশ’’।
অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ব্রিটেনের এই পদক্ষেপ হামাস এবং ইরানের কাছে ‘‘খুবই সমস্যাযুক্ত বার্তা’’ পাঠিয়েছে। কাটজ আরও বলেছেন, ইসরায়েল ‘‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী’’ কাজ করে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার ৮০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আরও ৯৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
একইসঙ্গে ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং অন্যান্য সমালোচকরা ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য এবং ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের পক্ষাবলম্বনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে অভিযুক্ত করছেন।
টিএম