ত্রিপুরায় আকস্মিক বন্যায় নিহত ১০, বাস্ত্যুচুত হাজার হাজার মানুষ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি থেকে বাস্ত্যুচুত হয়েছেন।
রাজ্যটিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার ত্রিপুরায় ক্রমবর্ধমান দুর্যোগ পরিস্থিতির মধ্যে ১০ জনের মতো মানুষ মারা গেছেন এবং আরও ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬০০টির বেশি পরিবারের ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ রাজ্যটির ৮টি জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া বন্যায় এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে ফোনে কথা বলেছেন এবং রাজ্যের বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেছেন। তিনি তার রাজ্যে অতিরিক্ত ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) কর্মীদের মোতায়েন করার দাবি করেছেন।
কর্মকর্তাদের মতে, দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতি এবং খোয়াই জেলায় ১০ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ১২ বছর বয়সী মেয়েও রয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় ত্রিপুরায় অবিরাম বর্ষণে ভূমিধস ও ডুবে যাওয়ার পৃথক ঘটনায় এক পরিবারের তিন সদস্যসহ অন্তত নয়জন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে (এনএফআর) ত্রিপুরায় ১০টি লোকাল ট্রেন বাতিল করেছে। এনএফআরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ভারী বৃষ্টির কারণে গোমতি জেলায় রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এই ট্রেনগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রাজ্য প্রশাসনের অনুরোধের পর আসাম রাইফেলসের সদস্যদের বিভিন্ন জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে একজন প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জানিয়েছেন। বন্যার কারণে আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের উদ্ধারে বেসামরিক প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছেন তারা।
আরও পড়ুন
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণ এতই বেশি যে বেশ কয়েকটি জায়গার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। রাজ্যের একটি সরকারি সূত্র বুধবার জানিয়েছে, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় সাধারণ সময়ের চেয়ে ১ হাজার ২০০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এমন অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণেই দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম হাবনিউজ জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে দক্ষিণ ত্রিপুরার বাগাফাতে। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অপরদিকে দক্ষিণ ত্রিপুরার বেলোনিয়াতে ৩২৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং গোমতীর অমরপুরে ৩০৭ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ত্রিপুরার এই বন্যার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে ফেনীর অবস্থা বেশ খারাপ। ফেনীর অনেক গ্রাম পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া গোমতী নদীর ভারত অংশের পানি বেড়ে তা বাংলাদেশের কুমিল্লায় প্রবেশ করছে।
টিএম