শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন প্রকল্প, লাভ বেশি কার?
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ১৫ বছরের শাসনামলে ভারতের সঙ্গে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে চুক্তি করেছিলেন। এসব প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে— বিশেষ করে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি করা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনোমিক টাইমস-ইনফ্রা মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রকল্পের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলো কেন করা হচ্ছে এই বিষয়টিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে ফুটে উঠেছে দুই দেশ এসব প্রকল্প থেকে কতটা লাভবান হবে।
মোংলা বন্দর
খুলনার বাগেরহাটের মোংলা বন্দরে চলছে উন্নয়ন ও উন্নতীকরণের কাজ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বন্দর সংস্কারের কাজ পেয়েছে ভারতভিত্তিক ‘ইগিস ইন্ডিয়া কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার প্রাইভেট লিমিটেড’।
মোংলা বন্দরের সংস্কারের বিষয়টি বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সংযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া এই বন্দরটি ইন্দো-বাংলা প্রটোকল রুট হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। যা ভারতের জাতীয় পানিপথ ১ এবং ২-এর সংযোগ স্থাপন করবে। এরমাধ্যমে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের নদীগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটবে। এতে করে সংকীর্ণ শিলিগুঁড়ি করিডরকে পাশ কাটিয়ে ভারত পণ্য পরিবহন করতে পারবে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর
মাতারবাড়িতে চলছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। ২০২৭ সাল থেকে বন্দরটির কার্যক্রম শুরুর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়— উত্তরপূর্ব ভারতের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরটি তৈরি করছে জাপানের জাইকা। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম বেল্ট এরিয়া এবং এরও বাইরে শিল্প সমষ্টির লক্ষ্যে বন্দরটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
উত্তরপূর্ব সড়ক-সংযোগ ব্যবস্থা
এই প্রকল্পটি করা হচ্ছে ভারতে। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করেছে জাপানের জাইকা। এটির লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সড়কের মধ্যে সংযোগ তৈরি করা।
প্রকল্পটির অংশ হিসেবে বিভিন্ন সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ চলছে। যারমধ্যে রয়েছে শিলং থেকে মেঘালয় এবং ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত। এছাড়া ব্রাক্ষণপাড়াজুড়ে তৈরি করা হচ্ছে ২০ কিলোমিটার সেতু।
আরও পড়ুন
বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে শিল্প অবকাঠামো বাড়ানোর অংশ এই প্রকল্প। ২০২৭ সালে যখন বাংলাদেশে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ শেষ হবে তখন এটির সঙ্গে ভারতের এসব সড়ককে যুক্ত করা হবে।
রেললাইন
গত নভেম্বরে বাংলাদেশের আখাউড়া আর ভারতের আগরতলার মধ্যে সীমান্ত রেললাইন চালু হয়। এটি ভারতের উত্তপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্বের রেললাইন। অপরদিকে খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প খুলনা ও মোংলা বন্দরের মধ্যে বাণিজ্য ও সংযোগ বৃদ্ধি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই রেললাইনের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের একটি বন্দরের সঙ্গে ভারত, নেপাল এবং ভুটান যুক্ত হবে। এতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
অভ্যন্তরীণ জলপথ
ইন্দো-বাংলা প্রটোকল রুট ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের পানিপথের সঙ্গে কলকাতার বন্দরকে সংযুক্ত করেছে। এটি গেছে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে।
বাংলাদেশের মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত থাকা জলপথের মাধ্যমে কার্গো পরিবহন করতে দুই দেশ থেকেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।
ভারতের বন্দর, পরিবহণ ও জলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জলপথ দিয়ে তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে কলকাতা, হলদিয়া এবং মোংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ হবে। এতে করে কার্গো পরিবহণ করা যাবে এবং পরিবহণের খরচ অনেকটাই কমবে। এই রুটের মাধ্যমে ফ্লাই অ্যাশ, পাথর, প্রকল্পের কার্গো, লোহাসহ বিভিন্ন জিনিস পরিবহণ করা হয়।
এদিকে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে আইন ও শাসন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এসবের মধ্যেই ভারত সরকার ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন-সংযোগ প্রকল্পের উপর নজর রাখছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত সরকার সমর্থিত এক্সিম ব্যাংক— যেটি বিভিন্ন দেশে ভারত সহযোগী প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করে থাকে— তারা ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
সূত্র: ইটি-ইনফ্রা
এমটিআই