ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেন শেখ হাসিনা
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নীরবতা ভেঙেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তিকে দায়ী করেছেন।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এ অভিযোগ করেছেন বলে জানানো হয়েছে। রোববার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তিকে অভিযুক্ত করে নিজের নীরবতা ভেঙেছেন।
ভারত সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের পেছনে ‘বিদেশিদের হাত থাকার’ সম্ভাবনার নিয়ে কথা বলার কয়েকদিন পরেই এই অভিযোগ সামনে এলো।
দ্য প্রিন্ট বলছে, শনিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা। বার্তাটি দ্য প্রিন্ট দেখেছে বলে দাবি করেছে। সেখানে হাসিনা বলেছেন, ‘আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম যদি আমি সেন্ট মার্টিন এবং বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিতাম।’
হাসিনা সরকার বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখেছে। চলতি বছরের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে হাসিনা বলেছিলেন, ‘একজন শেতাঙ্গ মানুষ’ তাকে একটি বিমান ঘাঁটির বিনিময়ে ক্ষমতায় মসৃণ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
নিজের সর্বশেষ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ধরনের বিদেশি শক্তির মাধ্যমে ‘ব্যবহৃত’ না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন।
মূলত ছাত্র-জনতার কয়েক সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের পর শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। পরে বাংলাদেশের সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং তার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন
হাসিনা বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করেছি যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। তারা আপনাদের (ছাত্রদের) লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, আমি তা করতে দেইনি।’
তিনি দাবি করেন, ‘হয়তো আজ যদি আমি দেশে থাকতাম তাহলে আরও প্রাণহানি হতো, আরও সম্পদ ধ্বংস হয়ে যেত।’
ভারতে থাকাকালীন তিনি আগামী সপ্তাহে মিডিয়াতেও ভাষণ দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহব্যাপী ছাত্র বিক্ষোভে ৩০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অন্যান্য আরও দেশ শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকায় নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে ওয়াশিংটন বলেছে, এই সরকার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে তারা আশা করে।
আরও পড়ুন
এদিকে দলীয় সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন। একইসঙ্গে নিজের পরজয়ও মেনে নিয়েছেন তিনি। হাসিনা বলেন, ‘আমি শিগগিরই ফিরে আসব ইনশাআল্লাহ। পরাজয় আমার, কিন্তু জয়ী হয়েছে বাংলাদেশের জনগণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেকে সরিয়ে দিয়েছি, আমি আপনাদের সমর্থন নিয়ে এসেছিলাম, আপনারাই ছিলেন আমার শক্তি, আপনারাই যখন আমাকে চাননি, আমি নিজেই তখন চলে এসেছি, পদত্যাগ করেছি। আমার কর্মী যারা আছেন, কেউ মনোবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে।’
টিএম