আমার দেখা সবচেয়ে কোমল হৃদয়ের মানুষ
দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম। ১৯৪৯ সালে জন্ম নেওয়া শেখ মোহাম্মদ আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দুবাই পুলিশের প্রধানের পদে ছিলেন। শেখ রাশেদ বিন সাইদ আল মাকতুমের তৃতীয় পুত্র তিনি। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা আমিরাতের ভাইস-প্রেসিডেন্টও এই শেখ মোহাম্মদ, সঙ্গে দুবাইয়ের শাসকও তিনি। তার বর্তমান ও সাবেক মিলে ছয় জন স্ত্রী রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। এ ছয় স্ত্রীর ঘরে তার রয়েছে ৩০ জন সন্তান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ ধনকুবের এই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক উঠে এসেছে তার নিজের লেখা ‘কিস্সাতি’ (আমার গল্প) বইটিতে। পঞ্চাশ পর্বে সে গ্রন্থ থেকেই নানা দিক তুলে এনেছেন মুহাম্মাদ শোয়াইব। আজ থাকছে পঞ্চম পর্ব।
আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মানুষটি হলো আমার মা লতিফা বিনতে হামদান বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। একইসঙ্গে আমার দেখা সবচেয়ে নম্র, কোমল ও বিনয়ী হৃদয়ের অধিকারীও তিনি।
১৯১২ সাল থেকে ১৯২২ অবধি আবুধাবির শাসক ছিলেন তার বাবা। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দুবাইয়ের শাসক রাশেদ বিন সাঈদ আল মাকতুমের জীবনসঙ্গিনী ছিলেন তিনি।
আমার মায়ের মৃত্যুর পর অনেকখানি বদলে যান আমার বাবা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেননি।
আমার বাবা-মায়ের বিয়ের এক বছর পর তাদের ঘরে আসে প্রথম কন্যা সন্তান শেখ মরিয়ম। তিন বছর পরে তিনি এই শাসনের উত্তরাধিকারী শেখ মাকতুম বিন রাশেদকে জন্ম দেন। তার নাম রাখেন আমাদের দাদা, যিনি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে দুবাই শাসন করেছিলেন। কয়েক বছর পরে পরিবারের দ্বিতীয় পুত্র হামদান বিন রাশেদ জন্ম নেন। আমার নানা আবুধাবির সাবেক শাসক হামদান বিন জায়েদ তার নাম রাখেন।
আমার মা সুন্দর কয়েকটি বছর কাটান। তার আরও এক ছেলে হয়েছিল, যার নাম রাখেন মারওয়ান। মারওয়ান অল্প বয়সে মর্মান্তিকভাবে মারা যান। আমার মা মারওয়ানের মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না। বেশ কয়েক বছর তিনি অস্বাভাবিক ছিলেন।
এরপর তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি একটি পুত্রের জন্ম দিয়েছেন, যার নাম তিনি মোহাম্মদ রেখেছেন। আমার বাবা স্বপ্ন ও এর ব্যাখ্যায় খুশি ছিলেন। কারণ, এটি তার জীবনসঙ্গিনীকে আবার স্বাভাবিক করছিল। মায়ের স্বপ্ন সত্যি হলো। আমি জন্ম নিলাম। আমার মা আমার নাম রাখেন মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম।
ছোট থেকেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়া ছিল আমার পছন্দ। আমি বাড়ির সবার আগে উঠতাম। উঠে দেখতাম আমার মা আমারও আগে থেকে জেগে আছেন। বাড়িতে গৃহকর্মী থাকলেও মা নিজেই আমার জন্য রুটি বানাতেন। আমি আমার মায়ের হাতে তৈরি সেই রুটির গন্ধ এখনও পাই।
চতুর্থ পর্ব : প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচার শিক্ষা শৈশবে
আমার মা ভেষজ চিকিৎসায় দক্ষতার জন্য এলাকায় পরিচিত ছিলেন। প্রতিদিন সকালে এ বিষয়ে মায়ের সঙ্গে আমার কথা হতো।
আমার মা অনেক পুরুষের চেয়েও ভালো গুলি চালাতে পারতেন। অশ্বারোহণেও দক্ষ ছিলেন তিনি, দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন উট। তিনি নারীদের মজলিস করতেন। তিনি তাদের সমস্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, চাহিদার কথা শেখ রাশেদের কাছে জানাতেন।
আমি স্কুলে যাওয়ার আগে তিনি প্রতিদিন আমার সকালের নাস্তা তৈরি করে দিতেন। রাস্তায় আমি আমার নাস্তা দুই ভাগে ভাগ করে অর্ধেক আমার জন্য আর বাকি অর্ধেক মাহারারকে (আমার ঘোড়া) দিতাম। আমি মাহারারকে খুব ভালোবাসতাম। আমি ভাবতাম যে ডিম দিয়ে ময়দার রুটি ঘোড়ার জন্য খুব উপকারী। আমার মা একসময় জেনে গেলেন যে আমি নাস্তার অর্ধেক আমার ঘোড়াকে দিয়ে দিই। পরদিন থেকে তিনি আমার নাস্তার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেন।
মা এমনই! তিনি ততক্ষণ সন্তুষ্ট হন না যতক্ষণ আমাদের খেতে না দেখেন। ততক্ষণ ঘুমান না যতক্ষণ আমরা না ঘুমাই। তিনি তখনই আনন্দ পান যখন আমাদের কষ্টগুলো দূর হয়ে যায়।
এনএফ