যেভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারবে আপনার মোবাইল ফোন
২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ৫ দশমিক ২ মাত্রার এক ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল। কিছু বাড়িঘর-ভবনে ফাটল ছাড়া অন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি এতে হয়নি, কোনো প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেনি।
তবে তারপরও এই ঘটনাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই ভূমিকম্পের কিছু সময় আগে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের অনেকেই তাদের মোবাইল ফোনে ভূমিকম্প সতর্কতা সংকেত পেয়েছিলেন। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরুর পর সেবারই প্রথম ঘটেছিল এই ঘটনা।
তারপর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বেকার্সফিল্ড অঞ্চলেও ৫ দশমিক ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। তবে এই ভূমিকম্পেরও ৩০ সেকেন্ড আগে বেকার্সফিল্ডের অধিকাংশ বাসিন্দা তাদের মোবাইল ফোনে সতর্কতা সংকেত পেয়েছিলেন।
ভূমিকম্পের আগে সতর্কবার্তা দিতে সক্ষম— এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ব জরিপ সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভের (ইউএসজিএস) সঙ্গে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে গুগল। সেই গবেষণার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল ওপরের দু’টি ঘটনা। মূলত গুগল এমন একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করতে চাইছে, যা যে কোনো এলাকায় ভূমিকম্প ঘটার অন্তত ৩০ সেকেন্ড আগে ব্যবহারকারীদের সতর্কতা সংকেত দিতে পারবে।
অনেকেই মনে করতে পারেন, মাত্র ৩০ সেকেণ্ড আগে সতর্কতা সংকেত কী এমন ভূমিকা রাখতে পারবে; কিন্তু সত্য হলো ভূমিকম্পের আগে এই কয়েক সেকেণ্ড মহামূল্যবান, অন্তত প্রাণহানি ঠেকানোর জন্য। এছাড়া ট্রেনের গতি কমানো, বিমান চলাচল এবং সেতু বা টানেলে গাড়ি প্রবেশের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ৩০ সেকেণ্ড।
এই অ্যাপ পুরোপুরি চালু হলে ভূপৃষ্ঠের গভীরে ৭০০ সিসোমিটার পর্যন্ত ভূমির গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে সক্ষম হবে সেটি। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ওরিগতন ও ওয়াশিংটনে ‘শেক অ্যালার্ট’ নামে সীমিত আকারে অ্যাপটি চালু আছে। তবে গুগল চাইছে, বিশ্বজুড়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহারকারীরা যেন অ্যাপটির সুফল পেতে পারেন।
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত বেশিরভাগ স্মার্টফোনে অন-বোর্ড অ্যাক্সিলোমিটার থাকে। এই অ্যাক্সিলোমিটার হলো এক প্রকার সার্কিট, যা এক জায়াগা থেকে আরেক জায়গায় ফোনের স্থানান্তর শনাক্ত করতে পারে। এসব অ্যাক্সিলোমিটার সাধারণত ফোনটিকে পোর্ট্রেট থেকে ল্যান্ডস্কেপ মোডে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া গুগলের অনবোর্ড ফিটনেস ট্র্যাকারের পদক্ষেপ গণনাও করে এসব অ্যাক্সিলোমিটার।
গুগলের গবেষকদের মতে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সংবেদনশীল এসব সেন্সরকে ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার মতো সক্ষম করে তোলা যেতে পারে। ইউএসজিএসের সঙ্গে গবেষণা হচ্ছে মূলত এ নিয়েই।
তবে এই কাজটি বেশ কঠিন, এছাড়া মানব সভ্যতার বর্তমান যে প্রযুক্তি— তাতে ভূমিকম্পের সতর্ক সংকেত দিতে সক্ষম হলেও এপিসেন্টার এলাকায় সতর্কতা সংকেত দিতে পারবে এমন প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরেও সম্ভব হবে না।
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম বিষয়ক সফটওয়্যার প্রকৌশলী মার্ক স্টোগাইটিস এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, “এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গতি। কারণ ভূমিকম্প ঘটার ঠিক আগে আগে এপিসেন্টারের ভূপৃষ্ঠের গভীরের নড়া-চড়া বুঝতে হলে প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি ক্ষমতাবান একটি অ্যাপ প্রয়োজন। আর এমন অ্যাপ প্রস্তুতের জন্য আমাদের আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এখন যে অ্যাপটি পরীক্ষামূলকভাবে চলচে, সেটি এপিসেন্টার থেকে অনেক দূরের এলাকায় সতর্কতা সংকেত দিতে সক্ষম।”
সূত্র : বিবিসি
এসএমডব্লিউ