মালিতে অতর্কিত হামলায় ওয়াগনারের ৫০ সৈন্য নিহত
আফ্রিকার দেশ মালিতে রাশিয়ার বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের ৫০ সৈন্য ও মালির সেনাবাহিনীর ১০ সদস্যকে হত্যার দাবি করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার স্থানীয় অনুসারী একটি গোষ্ঠী। মালির উত্তরাঞ্চলীয় কিদাল অঞ্চলে আলজেরিয়া সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে ওই সৈন্যদের হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর অনলাইন তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার অনুসারী জামা’আ নুসরাত উল-ইসলাম ওয়া আল-মুসলিম (জেএনআইএম) মালিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। এই গোষ্ঠীটি বলেছে, তাদের যোদ্ধারা শনিবার টিনজাউয়াতেনের দক্ষিণে মালির সেনাবাহিনী ও ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্যদের একটি বহরকে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
তবে একই দিনে দেশটির তুয়ারেগ বিদ্রোহী আন্দোলন নামে পরিচিত একটি সংগঠন একই এলাকায় মালির সৈন্য ও ওয়াগনার বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালানোর দাবি করেছে। পার্মানেন্ট স্ট্র্যাটেজিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর পিস, সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিএসপি-পিএসডি) নামের ওই বিদ্রোহী আন্দোলন বলেছে, তাদের সদস্যরা সীমান্ত শহর টিনজাউয়াতেনে কয়েক ডজন মালিয়ান সৈন্য ও ওয়াগনার যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। এই হামলায় মালির ও ওয়াগনারের অনেক সৈন্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।
২০১২ সাল থেকে সাহেল অঞ্চলজুড়ে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়া ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে মালির জান্তার লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য দুই বছর আগে পদক্ষেপ নেয় রাশিয়ার বেসরকারি ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার। এরপর থেকে এবারের হামলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সৈন্যের মৃত্যু ওয়াগনারের জন্য সবচেয়ে বড় পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে।
মালির সেনাবাহিনী ২০২০ ও ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। মালির জান্তা বলেছে, দেশটিতে রাশিয়ান বাহিনী রয়েছে; ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনী নয়। তবে প্রশিক্ষকরা রাশিয়া থেকে কেনা সরঞ্জাম ব্যবহার করে স্থানীয় সৈন্যদের সহায়তা করছেন।
এদিকে, সোমবার বিরল এক বিবৃতিতে ওয়াগনার বলেছে, যোদ্ধারা গত ২২ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত মালিয়ান সৈন্যদের সাথে টিনজাউয়াতেনের কাছে লড়াই করেছেন। এতে ওয়াগনার কমান্ডার সের্গেই শেভচেঙ্কোর মৃত্যুসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন তারা।
তবে কয়েকজন রাশিয়ান সামরিক ব্লগার বলেছেন, মালিতে সংঘর্ষে অন্তত ২০ ওয়াগনার যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। টিনজাউয়াতেন শহর থেকে প্রত্যাহার করার পর মালির সেনাবাহিনী ও ওয়াগনার বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা হয়। তুয়ারেগের নেতৃত্বাধীন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে শহরটির দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ওয়াগনারের যোদ্ধারা।
মালির দুটি নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, ওয়াগনার যোদ্ধা ও মালির সেনাবাহিনীর বহরটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সিএসপি-পিএসডি এবং জেএনআইএম—উভয়ের হামলার শিকার হয়েছে। তবে এই দুই গোষ্ঠীর মাঝে সমন্বয়ের বিষয়টি অস্পষ্ট। যদিও মালির কর্তৃপক্ষ তুয়ারেগ এবং জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো সমন্বয় করে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।
সোমবার মালির সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা গত ১৯ জুলাই বিদ্রোহী-অধ্যুষিত এলাকায় স্থিতিশীলতা আনার জন্য অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে ২৫ জুলাই হামলা শুরু হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস