যেভাবে ডান কান ছুঁয়ে যাওয়া গুলি থেকে বাঁচলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে শনিবারের সমাবেশটি রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনের আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেষ নির্বাচনী প্রচার হওয়ার কথা ছিল। সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার পর সেখান থেকে রিপাবলিকান পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মিলওয়াকিতে সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার।
কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘাতকের গুলির আঘাতে শেষ পর্যন্ত তার পরিকল্পনায় কাটছাঁট করতে হয়েছে। মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্টকে কীভাবে গুপ্তহত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে, চলুন তার একটি টাইমলাইন দেখে নেওয়া যাক।
• বিকেল ৫টা
বাটলার ফার্ম শোর সমাবেশস্থলের দরজা দুপুর ১টায় খোলা হয়। হাজার হাজার মানুষ সমাবেশস্থলে ছুটে বেড়ান। অনেকেই রিপাবলিকান শিবিরের লাল ক্যাপ আর সাদা রঙের টি শার্ট পরেন। বিকেল ৫টায় ট্রাম্পের বক্তৃতা শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তার বক্তৃতা শুরুর কোনও প্রস্তুতি দেখা যায়নি। ফলে ৯০ ডিগ্রি তাপে বৃক্ষহীন মাঠে তাপে পুড়েছেন সমর্থকরা।
• বিকেল ৬টা ৩ মিনিট
এক ঘণ্টা দেরিতে বাটলারের লি গ্রিনউড সমাবেশস্থলের মঞ্চে পৌঁছান ট্রাম্প। মঞ্চে উঠেই কয়েক মিনিট ধরে সমাবেশে উপস্থিত রিপাবলিকান কর্মীদের সাথে হাত মেলান তিনি। এ সময় তাকে বেশ হাস্যোজ্জ্বল দেখায়। সাদা শার্ট, নেভি ব্লু স্যুট জ্যাকেট আর সূর্যের আলো থেকে চোখকে দূরে রাখতে কপালে লাল মাগা (মেইক আমেরিকা গ্রেইট এগেইন) টুপি পরেন তিনি।
• বিকেল ৬টা ৫ মিনিট
উপস্থিত জনতার ভিড়ের আকার দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে ভাষণ শুরু করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি আশা করছি, সেখানে ভুয়া খবর দেখা যাবে। তিনি বলেছেন, আপনারা কেউ এটা বিশ্বাস করবেন না। তারপরে তিনি দেশ ‘নরকে যাচ্ছে’ বলে বক্তৃতা শুরু করেন।
• বিকেল ৬টা ১০ মিনিট
কয়েক মিনিট ধরে বক্তৃতার পর ট্রাম্প মঞ্চের ডানদিকে ঘোরেন এবং স্ক্রিনে অভিবাসনবিষয়ক একটি পরিসংখ্যানের বর্ণনা করতে শুরু করেন।
• বিকেল ৬টা ১২ মিনিট
প্রথম গুলি ছোড়া হয়। ট্রাম্প মঞ্চের পডিয়াম আঁকড়ে ধরে ডানদিকে তাকান। কয়েক সেকেন্ড কথা বলার পর হঠাৎ করে তিনি থেমে যান এবং ডান কান ধরেন। এরপর দ্বিতীয় গুলির শব্দ শোনা যায়। তারপর তৃতীয় গুলি...। ডান কান ধরেই পডিয়ামের পেছনে বসে পড়েন ট্রাম্প।
এ সময় সিক্রেট সার্ভিসের একজন পুরুষ এজেন্ট চিৎকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিচু হতে বলেন। এর পরপরই আরও কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। ভিড়ের মাঝে আতঙ্কিত লোকজন ব্যাপক চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। মঞ্চের পাশ থেকে তিনজন এজেন্ট ছুটে এসে ট্রাম্পকে আড়াল করেন।
গুলির এই ঘটনায় সমাবেশে আসা একজন নিহত ও আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার এক থেকে দুই সেকেন্ডের মধ্যে সিক্রেট সার্ভিসের এক সদস্য হামলাকারীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন।
এ সময় মঞ্চে থাকা একজন এজেন্ট বলেন, ‘‘হামলাকারীকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।’’
বাটলার কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি দেশটির সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, বন্দুকধারী মাঠের পাশের একটি অফিসের ভবনের ছাদ থেকে গুলি চালিয়েছে। ভবনটি আমেরিকান গ্লাস রিসার্চের। তারা এই ভবনটিকে গ্লাস কন্টেইনার শিল্পের জন্য ‘‘সম্পূর্ণ স্বাধীন গবেষণা কেন্দ্র ও পরীক্ষাগার’’ হিসেবে ব্যবহার করে।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ওয়াশিংটন পোস্ট পেয়েছে। ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে এই সংবাদমাধ্যম। সেখানে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, সেখান থেকে ৪০০ ফুটের কিছু বেশি দূরে একটি ভবনের ছাদে এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে আছে।
সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে তুলে নিয়ে তার চারপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে। এ সময় ট্রাম্পের চুল এলোমেলো দেখা যায়। মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার সময় তার ক্যাপ ও পায়ের জুতা খুঁজছিলেন তিনি। সেই সময় তিনি বলেন, দাঁড়াও, দাঁড়াও, দাঁড়াও। আমাকে জুতা পরতে দাও। মঞ্চে তার গালে ও ডান কানে রক্তের দাগ দেখা যায়।
পরে নিজেকে সামলে নিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে ছুড়ে মারেন। এ সময় চিৎকার করে বলেন, ‘‘ফাইট! ফাইট’’। এ সময় সমাবেশে উপস্থিত জনতা তাকে ঘিরে গর্জন করেন।
• বিকেল ৬টা ১৩ মিনিট
সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামিয়ে আনেন। তিনি মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে ছুড়তে থাকেন। এসময় এজেন্টরা তাকে ঘিরে ধরে একটি কালো এসইউভিতে তুলে দেন। পরে সেই গাড়িটি সমাবেশস্থল ছেড়ে চলে যায়।
• বিকেল ৮টা ৪২ মিনিট
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে ওই হামলার বিষয়ে প্রথম পোস্ট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই পোস্টে তিনি বলেন, একটি গুলি তার ডান কানের ওপরের অংশে বিদ্ধ হয়েছে।
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমি তাৎক্ষণিক বুঝতে পারি কিছু অঘটন ঘটেছে। আমি গুলির শব্দ শুনেছিলাম আর তখনই অনুভব করি গুলি আমার চামড়া ফুটো করে দিয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে কী ঘটেছে।’’
গুপ্তহত্যার এই চেষ্টা ঠেকানোয় মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস ও আইনপ্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। একই সঙ্গে হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
ট্রুথ স্যোশালে ট্রাম্প লিখেছেন, আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, এটা অবিশ্বাস্য।
আরও পড়ুন
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস।
এসএস