আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পাকিস্তানের
প্রতিবেশী আফগানিস্তানে ওপর হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নতুন সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাবে পাকিস্তান।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আরও বলেছেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক নাগরিকদেরকে লক্ষ্যবস্তু করে যেসব সন্ত্রাসী দল হামলা চালাচ্ছে বলে ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে, তাদের ওপর এই বিমান হামলা করা হচ্ছে।
এর আগে, পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বছরের মার্চ মাসে প্রতিবেশী দেশটিতে এমন একটি হামলার কথা স্বীকার করেছিলেন। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেছে।
খাজা আসিফ বলেছেন, ‘এটা ঠিক যে, আমরা আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা তা চালিয়ে যাব। আমরা তাদের কেক এবং পেস্ট্রি খেতে দেব না। যদি আক্রমণ করা হয়, আমরা পাল্টা আক্রমণ করব।’
পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামলার বৈধতা নিয়ে শঙ্কাও উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান আসন্ন হামলার বিষয়ে তালেবানকে আগে থেকে কিছুই জানায় না। তার ভাষায়: ‘এটি বিস্ময়ের উপাদানটি দূর করবে। কেন আমরা তাদের বলব, ‘প্রস্তুত হও, আমরা আসছি’?’
তালেবান বলেছে, এই ধরনের বক্তব্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। একইসঙ্গে আন্তঃসীমান্ত হামলার ‘পরিণাম’ ভোগ করতে হবে বলেও পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে তারা।
২০২১ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। পাকিস্তান অভিযোগ করে থাকে, পাকিস্তানি তালেবান বা টিটিপি নামে তালেবানের একটি দলের আফগানিস্তানে আশ্রয়স্থল রয়েছে।
খাজা আসিফ বলেছেন, ‘আফগানিস্তান টিটিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক। তারা যাতে পাকিস্তানে হামলা চালাতে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার না করে সে বিষয়ে আমাদের অনুরোধ সত্ত্বেও।’
পাকিস্তান সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী হামলা দমনের লক্ষ্যে একটি নতুন সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা কথা করেছে। এই অভিযানে প্রধানত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সক্রিয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে সামরিক বাহিনী।
সমালোচকদের পাশাপাশি দেশটির শেহবাজ সরকারের অভ্যন্তরে কিছু সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, বেইজিংয়ের চাপের পরে নতুন এই সামরিক অপারেশন শুরু করা হয়েছে। মূলত পাকিস্তানে অবস্থানরত চীনের ২৯ হাজার নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন বেইজিং।
বিপুল সংখ্যক এই চীনা নাগরিকদের মধ্যে ২৫০০ জন চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্পে কাজ করছেন। এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ।
আরও পড়ুন
চলতি বছরের মার্চ মাসে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে একটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করা চীনা প্রকৌশলীদের গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ চীনা প্রকৌশলী নিহত হন।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, হামলাটি চালানোর বিষয়ে প্রতিবেশী আফগানিস্তানে পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং আত্মঘাতী হামলা চালানো ব্যক্তিটিও একজন আফগান নাগরিক।
তবে সাম্প্রতিকতম সামরিক অভিযানগুলো চীনের চাপের কারণে হয়েছে বলে যে গুঞ্জন রয়েছে তা অস্বীকার করেছেন খাজা আসিফ। তবে তিনি বলেছেন, এই অভিযানগুলোর মাধ্যমে পাকিস্তানে চীনা প্রকল্প এবং চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকি মোকাবিলা করবে তার দেশ।
টিএম