বাইডেনের প্রার্থিতা নিয়ে যে অবস্থান তার পরিবারের সদস্যদের
গত সপ্তাহে নিজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কে হতাশাজনক হারের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রার্থিতা ত্যাগের পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকেই। তবে তার পরিবারের সদস্যরা চাইছেন, তিনি যেন প্রার্থী হিসেবে তার লড়াই অব্যাহত রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পরিবারের ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, গতকাল রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্টদের অবকাশকালীন আবাস ক্যাম্প ডেভিডে বৈঠক করেছেন বাইডেন পরিবারের সদস্যরা। জো বাইডেন ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রার্স্টলেডি জিল বাইডেন, সন্তান এবং নাতি-নাতনিরা। বৈঠকে বাইডেনকে তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন— তার সক্ষমতার ওপর তাদের আস্থা রয়েছে এবং তারা মনে করেন— আগামী চার বছর দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন জনগণকে সেবা প্রদানের জন্য সক্ষম।
সূত্রের বরাতে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কে বাইডেনের বিপর্যয়কর ফলাফলের ব্যাপারে তার পরিবারের সদস্যরা ভালোভাবেই অবগত। তবে তারপরও তারা মনে করেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেনই একমাত্র ব্যক্তি— যিনি ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারেন। এ ইস্যুতে তার স্ত্রী এবং মার্কিন ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন এবং তার ছেলে হান্টার বাইডেনের সমর্থন ছিল সবচেয়ে দৃঢ়।
ক্যাম্প ডেভিডের এই পারিবারিক সম্মিলনীর দিন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের অনেক আগেই নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির কোনো নাগরিক সর্বোচ্চ দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। আগামী নভেম্বরে হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই জো বাইডেনের সামনে, যিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনেও এ বাধা নেই। কারণ ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে প্রথম বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ট্রাম্প এবং ২০২০ সালে নিজে পরাজিত হয়েছিলেন বাইডেনের কাছে।
আসন্ন নির্বাচনে জয় পেতে ট্রাম্প এবং বাইডেন— উভয়ই মরিয়া। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের আয়োজেনে গত বৃহস্পতিবার ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী বাইডেন ও রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্প পরস্পরের মুখোমুখি হন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হন তারা।
পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যু এসেছে তাদের বিতর্কে।এসব ইস্যুতে কথা বলার সময় বাইডেন ও ট্রাম্প একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনার পাশাপাশি এবং পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করেছেন।
বিতর্কে দেশের অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী আগমণ ইস্যুতে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি তার বক্তব্য শেষ করেছেন এই বলে যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ গত সাড়ে তিন বছর ধরে ‘জাহান্নামে’ বসবাস করছে। অন্যদিকে, আদালতে সম্প্রতি ট্রাম্পের সাজার প্রসঙ্গ তুলে তাকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছেন বাইডেন।
বিতর্কের পর সিএনএনের তাৎক্ষণিক এক জরিপে দেখা যায়, দর্শকদের ৬৭ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে রয়েছেন। অন্যদিকে বাইডেনকে সমর্থন করছেন ৩৩ শতাংশ দর্শক।
তবে সিএনএন বলেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা দেশটির সব ভোটারদের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করেন না। যারা বিতর্কটি দেখেছেন, আর এই জরিপে অংশ নিয়েছেন, শুধু তাদের মতামতই এই ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকপন্থীদের সংখ্যা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
এসএমডব্লিউ