আফগানিস্তানে ‘কঠিন পরিণতি’ নিয়ে সতর্ক করলেন হিলারি
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে। তবে বাইডেনের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এর ‘কঠিন পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেছেন, এতে করে তালেবানের ক্ষমতা দখল করে নেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। আবারও গৃহযুদ্ধ শুরুর শঙ্কা দেখা দেবে দেশটিতে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (৯/১১) ওসামা বিন লাদেন নেতৃত্বাধীন আল-কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়ঙ্কর হামলা চালানো পর ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়ে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। তারপর থেকে ন্যাটো জোটের সঙ্গে তালেবানের লড়াই চললেও এতে শুধু লাখো মানুষ হতাহত হয়েছে, প্রকৃত অর্থে আফগানিস্তানে শান্তি ফেরেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী এই যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে চলতি মে’র মধ্যে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে একমত হয়ে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির সাবেক এক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করলেন।
রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন প্রশাসনকে সতর্ক করে হিলারি বলেন, ‘আমার মতে, এটা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত। এটাকে আমরা উভয় সমস্যা হিসেবে দেখি। আমরা জানি, সেনা প্রত্যাহার কিংবা থেকে যাওয়া, উভয়ের পরিণতি রয়েছে। প্রেসিডেন্ট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর কারণে কঠিন পরিণতির সৃষ্টি হতে পারে।’
এই সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে দুটি বিশাল পরিণতির বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন হিলারি। সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুল সরকারের পতন হতে পারে এবং ক্ষমতা চলে যেতে পারে তালেবানের হাতে। এতে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আবার পুনরুত্থান হতে পারে। এই বিষয়গুলোর ওপর মার্কিন সরকারের আরও মনোনিবেশ করাও উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হিলারি বলেন, ‘আমার মতে, এই দুটি কঠিন বিষয় মোকাবিলা করতে হবে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সমর্থন দেওয়া সেনাদের প্রত্যাহার করে নিলে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। কিন্তু সেই সম্ভাব্য পরিণতি থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার আফগান; যারা যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটোর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের রক্ষা করাও জরুরি এবং তাদের মধ্যে যে কোনো শরণার্থী গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৃহত্তর ভিসাদান কর্মসূচি চালু করা উচিত।
শুধু হিলারি নন আরেক সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইসও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে এর আগে কংগ্রেসের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক কমিটির সদস্যদের কথা বলে উদ্বেগ জানান। সেনা প্রত্যাহারের সরাসরি বিরোধিতাও করেন তারা।
বাইডেনের মতো হিলারিও একজন ডেমোক্র্যাট। নাইন ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে পূর্ণ সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তখন সেই অভিযানের পক্ষে একজন শক্ত সমর্থক ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। ওবামা প্রশাসনে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার থেকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহার শুরুর কয়েক দিন পরই মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হলো। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে এখনো ন্যাটো জোটের ৯ হাজার ৬০০ সেনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২ হাজার ৫০০ সেনা আমেরিকান।
এএস