আল-আকসার ইমামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনল ইসরায়েল
এক সৈন্যসহ চার ইসরায়েলিকে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীর প্রশংসা করায় জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে উসকানির অভিযোগ এনেছে ইসরায়েল। তবে আল-আকসা মসজিদের ইমাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘‘বানোয়াট’’ বলে এর নিন্দা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের সাবেক মুফতি ও বর্তমানে জেরুজালেমের সুপ্রিম ইসলামিক কাউন্সিলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন শেখ ইকরিমা সাবরি (৮৫)। জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদের ইমামও তিনি।
২০২২ সালের অক্টোবরে অধিকৃত পশ্চিম তীরের মালে আদুমিম বসতিতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপর গুলি চালিয়ে ইসরায়েলি এক সৈন্যকে হত্যা করেন ফিলিস্তিনি এক বন্দুকধারী। এই হত্যাকারীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তৃতা দেওয়ায় চলতি সপ্তাহে সাবরির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছে ইসরায়েল।
এছাড়া একই বছরের এপ্রিলে তেল আবিবে হামলা চালান রা’আদ হাজাম নামের এক ফিলিস্তিনি। হামলায় তিন ইসরায়েলি নিহত ও ছয়জন আহত হন। পরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন ২৮ বছর বয়সী রা’আদ হাজাম। ইমাম শেখ ইকরিমা এই হামলাকারীরও প্রশংসা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।
বুধবার ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘জেরুজালেমের সাবেক মুফতি সন্ত্রাসবাদে উসকানি ও সন্ত্রাসীদের প্রশংসা করায় সরকারি অ্যাটর্নির অফিস জেরুজালেমের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেছে।’’
এতে বলা হয়েছে, হাজামের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে যাওয়ার সময় ‘‘সন্ত্রাসীদের প্রশংসা ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন’’ মুফতি সাবরি। তবে ইসরায়েলের আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করে সাবরি বলেছেন, হামলাকারীদের মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
জেরুজালেমের এই ইমাম বলেন, ‘‘এটা একটি মিথ্যা অভিযোগ। এটা বানোয়াট এবং অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর সমবেদনা জানানোর অর্থ এই নয় যে, আমরা বাচ্চারা যা করেছে তা সমর্থন করি।’’
সাবরির আইনজীবী খালেদ জাবারকা বলেছেন, তার মক্কেলকে রাজনৈতিক কারণে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এএফপিকে তিনি বলেন, এই অভিযোগ রাজনৈতিক পদক্ষেপের ফল, আইনী পদক্ষেপ নয়। শেখ দুই বছর ধরে নির্যাতিত।’’
জেরুজালেমের ঐতিহাসিক ওল্ড সিটিতে আল-আকসা মসজিদ অবস্থিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয় না এবং এই অঞ্চলকে অবৈধভাবে দখলকৃত বলে মনে করে। আল-আকসা মসজিদ ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলোর অন্যতম একটি এবং এটিকে আল-হারাম আল-শরিফ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ইহুদিদের বিশ্বাস, ৩৫ একর আয়তনের আল-আকসা চত্বরে বাইবেলে বর্ণিত ইহুদিদের মন্দিরের অবস্থান রয়েছে। তাদের কাছে আল-আকসা মসজিদটি টেম্পল মাউন্ট হিসেবে পরিচিত। এ স্থানটি ঘিরে ইহুদিদের সাথে মুসলিমদের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায়।
আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ১৯৬৭ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী, অমুসলিমদের আল-আকসা পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হলেও সেখানে তাদের প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসরায়েল আল-আকসায় নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার চেষ্টা করতে পারে বলে অনেক ফিলিস্তিনি আশঙ্কা করছেন।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।
এসএস