মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহী-জান্তা সৈন্যদের ব্যাপক লড়াই
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো জান্তা সৈন্যদের সঙ্গে সেখানকার জাতিগত সশস্ত্র একটি গোষ্ঠীর ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে অন্তত দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে বুধবার স্থানীয় বাসিন্দারা ও গণমাধ্যম জানিয়েছে।
শান রাজ্যের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) সদস্যরা মঙ্গলবার ভোরের দিকে কিয়াউকমি শহরে জান্তা সৈন্যদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। মিয়ানমারের সাথে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটে শহরটির অবস্থান।
চীনের মধ্যস্থতায় টিএনএলএর সাথে মিয়ানমারের সাক্ষরিত অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে জাতিগত সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সদস্যরা। এর আগে, শান রাজ্যে জান্তা বাহিনী এবং টিএনএলএ ও অন্য দুটি সহযোগী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে কয়েক সপ্তাহের লড়াইয়ের অবসানে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল।
স্থানীয় একজন উদ্ধারকর্মী নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, বুধবার সকালের দিকে টিএনএলএর যোদ্ধারা কিয়াউকমি শহরে জান্তা নিয়ন্ত্রিত একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়েছে
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে বসবাসরত বেসামরিক নাগরিকরা তাদের বাড়িঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। অপর একজন উদ্ধারকর্মী বলেছেন, মঙ্গলবার কামানের গোলার আঘাতে শহরটিতে দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত ও দু’জন আহত হয়েছেন। তবে শহরের কোন প্রান্তে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে, সেই বিষয়ে কোনও তথ্য জানাননি তিনি।
টিএনএলএ বলেছে, মঙ্গলবার নাউংচো ও সিপাও শহরের পাশাপাশি প্রতিবেশী মান্দালয় অঞ্চলের মোগোকের রুবি খনি এলাকায় সেনাবাহিনীর সাথে টিএনএলএ যোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এই সংঘাতের বিষয়ে মিয়ানমারের জান্তার মুখপাত্রের মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।
মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও টিএনএলএর যোদ্ধারা।
গত বছরের অক্টোবরে আকস্মিক হামলা চালিয়ে এই জোটের সদস্যরা চীন সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের বিশাল এলাকা ও কয়েকটি লাভজনক বাণিজ্য ক্রসিং দখলে নেয়। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর জান্তার জন্য ওই হামলা সবচেয়ে বড় ধাক্কা হিসেবে আসে।
পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের মধ্যস্থতায় সামরিক জান্তার সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। চুক্তির পরও জোটের সদস্যরা দখলকৃত অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে একই সময়ে উভয়পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গত বছরের এপ্রিল-মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে চীনের সাথে মিয়ানমারের সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমেছে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস