সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল আর্জেন্টিনা
ফুটবলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দেশ আর্জেন্টিনায় ব্যাপকমাত্রায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজধানী বুয়েন্স এইরেস কার্যত পরিণত হয়েছে সেই বিক্ষোভের কেন্দ্রে।
ডলারের সংকট ও মূল্যস্ফীতিতে দিশেহারা আর্জেন্টিনার টালমাটাল অর্থনীতি সামাল দিতে সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। সেসব কর্মসূচির বিরুদ্ধেই বিক্ষোভ শুরু করেছেন জনসাধারণ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার আক্ষরিক অর্থেই ‘রণক্ষেত্রে’ পরিণত হয়েছিল বুয়েন্স এইরেস। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এদিন রায়ট পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ, জবাবে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও হাতবোমা ছুড়েছে বিক্ষোভকারীরা। শত শত গাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। মূল্যস্ফীতি ছুঁয়েছে ৩০০ শতাংশের কোঠা। দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি দারিদ্র এবং চুড়ান্ত দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে।
গত ছয় মাস আগে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জাভিয়ের মিলেই। ক্ষমতা গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের পেনশন বন্ধ করা, শ্রমিক অধিকারকে পাশ কাটিয়ে শ্রম ঘণ্টা বৃদ্ধি করাসহ বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেন তিনি। মিলেইয়ের এসব কর্মসূচিই জনগণকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে থাকে। আর্জেন্টিনার পার্লামেন্ট সিনেটেরও প্রায় অর্ধেক সদস্য মিলেইয়ের এসব সংস্কার কর্মসূচির বিরোধিতা করছেন।
বুধবার আর্জেন্টিনার পার্লামেন্ট কংগ্রেসে অধিবেশন চলার সময় সেখানে ঢোকার চেষ্টা করেন একদল বিক্ষোভকারী। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় এমপিও ছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পিপার স্প্রে ব্যবহার করেছে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীর পাশাপাপশি ৫ জন বিরোধী দলীয় এমপিও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তাদের সঙ্গে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন পুলিশ সদস্যও। পার্লামেন্ট চত্বরে বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৫৫ বছর বয়সী আইনজীবী ফ্যাবিও নুনেজও ছিলেন বিক্ষোভকারীদের দলে। এএফপিকে এই আইনজীবী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মিলেই যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন, সেগুলো আর্জেন্টিনাকে অন্তত ১০০ বছর পিছিয়ে দেবে। আমরা এটা হতে দিতে পারি না।’
এদিকে, বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন জাভিয়ের মিলেই। ভাষণে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা আর্জেন্টিনাকে পরিবর্তন করতে চাই। এই দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে উদার দেশ হিসেবে পরিচিত করাতে চাই।’
সূত্র : বিবিসি
এসএমডব্লিউ