গাজায় আরও এক মেয়র নিহত, ইসরায়েলের লাগামহীন হামলা চলছেই
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও এক মেয়র নিহত হয়েছেন। নিহত ওই মেয়রের নাম ইয়াদ আল-মাগারি। তিনি গাজার নুসেইরাতের মেয়র ছিলেন।
এদিকে গাজা ভূখণ্ডজুড়ে ইসরায়েলের লাগামহীন হামলা অব্যাহত রয়েছে। এসব হামলায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। শুক্রবার (৭ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আল জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মধ্য গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে নুসেইরাতের জনপ্রিয় মেয়র ইয়াদ আল-মাগারিও রয়েছেন। পৌরসভা দপ্তরে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে তারা প্রাণ হারান।
— Ramy Abdu| (@RamAbdu) June 6, 2024
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের চেয়ারম্যান রামি আবদুল নিহত আল-মাগারিকে ‘গাজা উপত্যকার সবচেয়ে সক্রিয় মেয়রদের একজন’ বলে অভিহিত করেছেন।
এছাড়া গাজার মিডিয়া অফিস নুসেইরাতের মেয়রকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে নুসেইরাতের মেয়র ইয়াদ আহমেদ আল-মাগারির হত্যাকাণ্ডকে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আল-মাগারি ‘নিজের দায়িত্ব ও কাজের প্রতি অনুগত ও নিবেদিত’ ছিলেন এবং যুদ্ধের শুরু থেকে পুরোটা সময়জুড়ে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের লোকদের সহায়তায় নিযুক্ত ছিলেন।
এর আগে ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় আজ-জাহরা এবং মধ্য গাজার মাগাজি পৌরসভার মেয়রও নিহত হয়েছিলেন। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি পৌরসভার সদর দপ্তরও ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি হামলায় নিহত মেয়ররা ছিলেন পরিশ্রমী ও বিরতিহীন সেবার বিশ্বস্ত উদাহরণ।’
এদিকে মধ্য গাজার মাগাজি শরণার্থী শিবিরে একটি আবাসিক বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় চারজন নিহত এবং আরও ছয়জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে আল জাজিরা জানিয়েছে।
অন্যদিকে গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান আক্রমণে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৬৫৪ জনে পৌঁছেছে বলে বৃহস্পতিবার অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হামলায় আরও ৮৩ হাজার ৩০৯ জন আহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৬৮ জন নিহত হয়েছেন বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
টিএম