গাজায় তাঁবু ক্যাম্পে আবারও হামলা, ১২ নারীসহ নিহত অন্তত ২১
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বাস্তুচ্যুতদের ক্যাম্পে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১২ জন নারী। হামলায় আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক মানুষ।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরের কাছে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু ক্যাম্পে ইসরায়েল হামলা চালালে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। বুধবার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরের কাছে আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর একটি তাঁবু ক্যাম্পে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মকর্তারা এবং ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে।
এর আগে রোববার রাতে গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরে বাস্তুচ্যুত লোকদের শিবিরে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত হন। সর্বশেষ এই হামলা এমন এক সময়ে হলো যখন আগের ওই হামলার কারণে ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে।
গাজার চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাফা গভর্নরেটে হওয়া এই হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ১২ জন নারী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছে, হামলায় আরও ৬৪ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ওই এলাকাটিতে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে।
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফার আল-মাওয়াসিতে হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। আগ্রাসন পরিচালনাকারী এই সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গত কয়েক ঘণ্টার প্রতিবেদনের বিপরীতে (আমরা বলতে চাই), আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) আল-মাওয়াসির ওই মানবিক এলাকায় হামলা করেনি।’
ইসরায়েল এর আগে পশ্চিম রাফাতে আল-মাওয়াসিকে মানবিক এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছিল এবং সেসময় ফিলিস্তিনিদের তাদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে সরে যাওয়া উচিত বলে জানিয়েছিল।
আল জাজিরার হিন্দ খুউদারি গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী আরেকটি অস্থায়ী তাঁবু ক্যাম্পকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে, যেখানে বেশিরভাগ মানুষই ছিলেন নারী ও শিশু।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজা উপত্যকা জুড়ে নিরাপদ কোনও এলাকা নেই। রাফাতে কোনো হাসপাতাল নেই। আহত ও নিহতদের সবাইকে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কর্পস ফিল্ড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই।’
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৮১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
টিএম