রাফাহের ৬ লাখ শিশুর জন্য কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়: ইউনিসেফ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহ শহরে হামলার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছে ইসরায়েল। এমনকি হামাসের সঙ্গে চুক্তি হোক বা না হোক, ইসরায়েল রাফাহতে হামলা চালাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
এমন অবস্থায় রাফাহ শহরে আশ্রয় নেওয়া শিশুদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলেছে, রাফাহের ৬ লাখ শিশুর জন্য কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়।
সোমবার (৬ মে) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফাহ শহরের ৬ লাখ শিশুর জন্য কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয় বলে সোমবার সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। একইসঙ্গে শিশুদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং রাফাহতে ইসরায়েলি হামলার বিষয়েও সতর্ক করেছে শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক এই সংস্থাটি।
এর আগে সোমবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একাংশ খালি করে দিতে সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্দেশের পর রাফাহর পূর্বাঞ্চল থেকে বহু মানুষ সরে যেতে শুরু করেন।
মূলত গাজার এই শহরটি এখন ১৪ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির আশ্রয়স্থল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সেই বিজ্ঞপ্তির পরই জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বিবৃতি জারি করে এই সতর্কতা জানায়।
রাফাহতে লক্ষাধিক শিশুর বসবাসের বিষয়টি তুলে ধরে সোমবার দেওয়া বিবৃতিতে ইউনিসেফ বলেছে: ‘ইউনিসেফ বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে এবং তাদের মৌলিক চাহিদা, যেমন হাসপাতাল এবং আশ্রয়কেন্দ্রের মতো অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ এবং সামরিক পন্থায় ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।’
আনাদোলু বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এই অঞ্চলে শিশুদের উচ্চ ঘনত্বের কথা উল্লেখ করে ইউনিসেফের বিবৃতিতে ৬ লাখ শিশুর জন্য রাফাহতে সামরিক হামলার ‘বিপর্যয়কর’ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাফাহ এখন শিশুদের শহর, এইসব শিশুদের গাজার অন্য কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়।’
রাফাহতে ‘এখন প্রায় ১২ লাখ মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে’ উল্লেখ করে রাসেল বলেছেন: ‘যদি সেখানে বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু হয়, তবে শিশুরা কেবল সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকবে না, বরং বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্কের ঝুঁকিতেও থাকবে এবং সেটিও আবার এমন এক সময়ে যখন তাদের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে আছে।’
রাসেল আরও উল্লেখ করেছেন, যুদ্ধের কারণে কিছু শিশু একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তারা তাদের ঘরবাড়ি ও পরিবার হারিয়েছে। আর তাই শিশুদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সাম্প্রতিক তথ্য উদ্ধৃত করে ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২ বছরের কম বয়সী ৭৮ হাজার শিশু এবং ৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখ ৭৫ হাজার শিশুর পাশাপাশি ২ বছরের কম বয়সী ৮ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির সম্মুখীন এবং আরও ৬৫ হাজার শিশু বিকলত্বের সম্মুখীন হয়েছে।
টিএম