ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে যাওয়ার চেষ্টা, ৫ অভিবাসীর মৃত্যু
ইংলিশ চ্যানেলে পাড়ি দিতে গিয়ে পাঁচ অভিবাসী মারা গেছেন। ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার চেষ্টার সময় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।
মৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোট জনাকীর্ণ নৌকায় ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়ার সময় এক শিশুসহ পাঁচজন আশ্রয়প্রার্থী মারা গেছেন। ব্রিটিশ সরকার কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডায় নির্বাসনের বিল অনুমোদনের কয়েক ঘণ্টা পর এই ঘটনা ঘটে।
আল জাজিরা বলছে, ১১২ জনকে বহনকারী নৌকাটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত শিপিং লেন অতিক্রম করতে ফরাসি বন্দর ক্যালাইসের প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত উইমেরেক্স থেকে রওনা হয়েছিল।
উদ্ধারকারীরা ৪৯ জনকে তুলে নেয় এবং তাদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অন্যরা নৌকায় থেকে যায় এবং ব্রিটেনের দিকে তাদের যাত্রা অব্যাহত রাখে।
স্থানীয় প্রিফেক্ট জ্যাক বিল্যান্ট মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সকালে অভিবাসীবোঝাই একটি নৌকায় ট্র্যাজেডি ঘটেছে। আমরা পাঁচজনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি, মৃতদের একজন সাত বছর বয়সী মেয়ে, একজন নারী এবং তিনজন পুরুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপকূল থেকে কয়েকশ মিটার দূরে ইঞ্জিনটি বন্ধ হয়ে যায় এবং বেশ কয়েকজন পানিতে পড়ে যায়।’
ফরাসি কোস্টগার্ড জানিয়েছে, ৫৮ জন আরোহী নৌকাটিতে ছিলেন এবং তারা এখনও বেঁচে থাকা অন্যদের সন্ধান করছে।
বিল্যান্ট বলেন, ‘তারা (অভিবাসীরা) চায়নি তাদের উদ্ধার করা হোক। তারা নৌকার ইঞ্জিনটি পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয় এবং পরে তারা ব্রিটেনের দিকে রওনা হয়।’
আল জাজিরা বলছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৬ হাজারেরও বেশি লোক ছোট ও জনাকীর্ণ নৌকায় ব্রিটেনে পৌঁছেছেন। এভাবে ব্রিটেনে প্রবেশের চেষ্টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ ব্রিটিশ উপকূলে পৌঁছানোর আগেই ঢেউসহ বিভিন্ন কারণে বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
অবশ্য যুক্তরাজ্যের সরকার রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানোর জন্য একটি নীতির অনুমোদন পেতে দুই বছর কাজ করেছে। যুক্তরাজ্যের সংসদ অবশেষে একদিন আগেই নির্বাসনের অনুমতি দিয়ে আইন পাস সম্পন্নও করে।
হাউস অব লর্ডসে বিলটি পাস হয় গত সোমবার রাতে। পাসের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, ‘এখন শুধু (রুয়ান্ডাগামী) ফ্লাইটগুলোর ছাড়ার অপেক্ষা। কোনো কিছুই আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।’
তার দাবি, ‘এই বিল পাস শুধু (আইন প্রণয়নের পথে) এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া নয়, বরং অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক সমীকরণেও মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।’
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে সুনাক বলেছিলেন, ‘গত বসন্তেই স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। দুর্ভাগ্যবশত তা মিস হয়েছে। তবে আশা করছি আগামী ১০ থেকে ১৫ সপ্তাহের মধ্যে রুয়ান্ডাগামী ফ্লাইটগুলো চালু করা সম্ভব হবে।’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ইংলিশ চ্যানেলসহ অন্যান্য সীমান্তপথ দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের দরিদ্র অঞ্চলগুলো থেকে শত শত শরণার্থী এসে ভিড় করছেন ব্রিটেনে।
২০১৯ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে কনজারভেটিভ পার্টি। নির্বাচনে দলটির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করা।
কিন্তু বাস্তবে তাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে কনজারভেটিভ সরকার। পাশাপাশি গত চার বছরে প্রতিনিয়ত দেশটিতে বেড়েছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমনের হার। সর্বশেষ গত বছর দেশটিতে এসেছেন রেকর্ড ৭ লাখ ৪৫ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী।
টিএম