মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা টিকটকের
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার যদি সত্যিই আইন করে দেশটিতে সংক্ষিপ্ত ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করে, সেক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয় এই অ্যাপটির মালিক চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের কর্তৃপক্ষ।
বাইটড্যান্স কোম্পানির মার্কিন শাখার কর্মকর্তা এবং টিকটকের পাবলিক পলিসি বিভাগের প্রধান মাইকেল বেকারম্যান সোমবার রুশ সংবাদমাধ্যম রাশিয়া টুডের (আরটি) কাছে এ ইস্যুতে কোম্পানির অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই অনাকাঙিক্ষত যে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের রিপাবলিকানপন্থি স্পিকার এবং জো বাইডেন, যিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা— উভয়েই টিকটক নিষিদ্ধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
‘যাই হোক, তাদের কাজ তারা করবেন। তবে সত্যিই যদি যুক্তরাষ্ট্র এই আইন চালু করে, তাহলে প্রেসিডেন্ট যেদিন (আইনটিতে) স্বাক্ষর করবেন, সেদিনই আমরা আদালতে এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কার্যক্রম শুরু করব।’
আরও পড়ুন
২০১৬ সালে চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স প্রথম বাজারে আনে কন্টেন্ট শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক। বাজারে আসার পরপরই ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায় অ্যাপটি। ২০২২ সালে এক বিবৃতিতে বাইটড্যান্স জানিয়েছিল, বিশ্বজুড়ে টিকটক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৭৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে মার্কিনীদের সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের মধ্যেও টিকটক খুব জনপ্রিয়। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দেশটিতে টিকটক ব্যবহারকারীদের মোট সংখ্যা ১৭ কোটি। এদের অধিকাংশই অল্পবয়সী তরুণ-তরুণী।
২০২১ সালে টিকটকের বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকদের স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগ ওঠে। ওই বছরই মার্কিন সেনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এই অ্যাপটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন। পরের বছর ২০২২ সালে দেশটির সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও একই আদেশ দেওয়া হয়।
এবার সাধারণ পর্যায়ে টিকটক ব্যবহার নিষিদ্ধের পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে টিকটক নিষিদ্ধের প্রস্তাবে ভোট হয়েছিল। তাতে এই অ্যাপটি নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩৬০ জন প্রতিনিধি, বিপক্ষে দিয়েছেন ৫০ জন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আইনটির অনুলিপি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যে কোনো সময়ে তিনি তাতে স্বাক্ষর করতে পারেন এবং তিনি স্বাক্ষর করলেই তা আইনটি পুরো যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হবে।
বেকারম্যান বলেন, ‘যদি আইনটি পাস হয়, তার ফলাফল হবে ভয়াবহ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে যে ১৭ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছেন, তাদের অনেকের আয়ের উৎস এই অ্যাপটি। অন্তত ৭০ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছেন, যারা ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং এই অ্যাপটির মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালান। তাই (আইনটি কার্যকর হলে) আদালতে আমাদের লড়াই করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, নাগরিকদের কাছে টিকটকের অতিমাত্রায় জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা মার্কিন রাজনীতিবিদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সেই দুশ্চিন্তারই ফসল হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে পাস হওয়া বিলটি।
সূত্র : আরটি
এসএমডব্লিউ