ইরানকে জবাব দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েলের মাটিতে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সমন্বিত জবাব দেবার লক্ষ্যে মিত্রদের সঙ্গে কাজ করছে ওয়াশিংটন। ইসরায়েলকে সংযম প্রদর্শন এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে বাইডেন।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জি-৭ জোট এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র-অংশীদারদের এবং কংগ্রেসের দ্বিদলীয় নেতাদের সমন্বয়ে বড় আকারের প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য কাজ করছেন।’
সুলিভান আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সামনের দিনগুলোতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। তাছাড়া, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর এবং ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে সমর্থনকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
ইসরায়েলের উদ্দেশে বারবার উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। ইরানের সঙ্গে কোন সংঘাত বা যুদ্ধ দেখতে চান না বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি।
যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকারে এখনও অটল রয়েছেন। যদিও আক্রমণের পরিকল্পনার ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্য তারা দেননি।
ইসরায়েলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেছেন, সময় অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ।
অপরদিকে, ইরানের মাটিতে ইসরায়েলের ধরনের যেকোন পাল্টা আক্রমণের আরও কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্ব রয়েছে ইরানের। সেই দ্বন্দ্ব আরও ব্যাপকভাবে বেড়েছে গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে।
চলমান এই বৈরীতার মধ্যেই গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে বোমা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিহত হন ১৩ জন। নিহতদের মধ্যে ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) দুই জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা জাহেদী এবং মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমিও ছিলেন।
হামলার দায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েল স্বীকার করেনি। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণ যা পাওয়া গেছে,তাতে হামলাটি যে আইডিএফ করেছিল— তা পরিষ্কার।
গত সপ্তাহে ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন— এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
তারপর শনিবার রাত ও রোববার ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ৩ শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের সামরিক বাহিনী। হামলায় হতাহতের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান ও আঞ্চলিক মিত্রদের সহায়তায় বেশিরভাগ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে ইসরায়েলের ৯টি স্থাপনায় ইরানি ড্রোন আঘাত হানতে সফল হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলের বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রধান জোনাথন রাইনহোল্ড ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, ইসরায়েলের পাল্টা হামলা হয়তো ইরানকে লক্ষ্য করে হবে । তবে বেসামরিক লোকজনের হত্যার পরিকল্পনা নেই এতে। তিনি আরও বলেন, ইরান হিসাবী পরিকল্পনা করলেও এর ফল চূড়ান্ত বিপদের দিকে মোড় নিতে পারে।
তাছাড়া, সাইবার নিরাপত্তা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হোয়াইট নাইট ল্যাবসের গ্রেগরি হ্যাচার অনুমান করছে, ইসরায়েল ইরানের কর্মকর্তাদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা বা সাইবার হামলা চালাতে পারে।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের জন্য তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন নেতানিয়াহু। তাছাড়া তার নিজ দেশের জিম্মিদের হামাসের হাত থেকে মুক্ত করার জন্যও প্রচণ্ড অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে রয়েছেন তিনি।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
এসএমডব্লিউ