ফিলিস্তিন কি জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পাবে?
জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনের নাম সুপারিশ করা হবে কি না— এ প্রশ্নে ভোট হবে বিশ্বের বৃহত্তম এই সংস্থার সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা পরিষদে। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ১৯ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে হবে ভোট।
জাতিসংঘের সনদ অনুসারে, কোনো দেশ যদি এই সংস্থার সদস্য হতে চায়—সেক্ষেত্রে তাকে প্রথমে আবেদনের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ জোগাড় করতে হয়। আবেদন পত্রের সঙ্গে সেই সুপারিশ সংযুক্ত করলেই কেবল দেশটিকে সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৫। এদের মধ্যে ৫টি রাষ্ট্র স্থায়ী এবং বাকি ১০টি অস্থায়ী। পরিষদে কোনো প্রস্তাব উত্থাপিত হলে যে কোনো স্থায়ী সদস্য আপত্তি জানানোর মাধ্যমে সেটি বাতিল করে দিতে পারেন। এই ক্ষমতাটি ‘ভেটো’ নামে পরিচিত। কেবল স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ‘ভেটো’ ক্ষমতা রয়েছে।
অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ভেটো ক্ষমতা নেই। জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্রের মধ্য থেকে তাদের বেছে নেওয়া হয় এবং এই সদস্যপদের মেয়াদ হয় ২ বছর।
প্রতি মাসে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের পদটি আবর্তিত হয়। ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের প্রত্যেকেই ক্রমানুযায়ী এক মাসের জন্য পরিষদের প্রেসিডেন্টের আসনে বসতে পারে। চলতি এপ্রিলে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছে অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র মাল্টা।
ভোটে যদি নিরাপত্তা পরিষদের অন্তত ৯টি সদস্যরাষ্ট্র পক্ষে ভোট দেয় এবং স্থায়ী ৫ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীন— স্থায়ী এই পাঁচ সদস্যরাষ্ট্রের কোনোটিই যদি ভোটের প্রস্তাবে ভেটো না দেয়— কেবল তাহলেই নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ অর্জন করতে পারবে ফিলিস্তিন।
এর আগে ৮ এপ্রিল নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে মাল্টার জাতিসংঘ দূত ভানেসা ফ্রেজিয়ের জানিয়েছিলেন, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনের পক্ষে সুপারিশের ব্যাপারে চলতি এপ্রিলেই সিদ্ধান্ত নেবে নিরাপত্তা পরিষদ।
এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার পরিষদের অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র আলজেরিয়া ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের সুপারিশ সংক্রান্ত ভোটের একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে। পরে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ভোটের দিন ঠিক হয়। বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, পূর্ণ সদস্যপদের জন্য বহু বছর ধরে চেষ্টা-তদবিরের পর ২০১১ সালে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে জাতিসংঘে প্রবেশের অনুমতি পায় ফিলিস্তিন। এই ক্যাটাগরিভুক্ত দেশ বা ভূখণ্ডগুলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনা-বিতর্কে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু উত্থাপিত কোনো প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার এক্তিয়ার তাদের নেই।
গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ফের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য তৎপরতা শুরু করে ফিলিস্তিন, আর এই তৎপরতার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় শেষ হবে শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটের মধ্যে দিয়ে।
শান্তিপূর্ণ দ্বিরাষ্ট্র সমাধান
পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেম— এই তিন ভূখণ্ডের সমন্বয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র চায় ফিলিস্তিন। কিন্তু এই ৩টি ভূখণ্ডই ১৯৬৭ সাল থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল।
নিরাপত্তা পরিষদ গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে ‘ফিলিস্তিন’ এবং ‘ইসরায়েল’ নামে দু’টি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে সমর্থন ও তৎপরতা জারি রেখেছে। ১৯৯০ সালে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এ বিষয়ক একটি দলিলে স্বাক্ষরও করেছিল ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা।
ভোট প্রসঙ্গে ইসরায়েলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের প্রধান লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড ভেটো প্রদানের ইঙ্গিত দেননি।
তবে রয়টার্সকে তিনি বলেছেন,, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে যে জায়গায় পৌঁছাতে চাই, অর্থাৎ দ্বিরাষ্ট্র সমাধান….. আমাদের মনে হয় না যে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বা ভোট আমাদের সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে।’