এক দশকে পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি অভিবাসী : জাতিসংঘ
গত এক দশকে বিভিন্ন অভিবাসন রুটে মারা গেছেন রেকর্ডসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাদের বেশিরভাগ মারা গেছেন পানিতে ডুবেই। জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম বলছে, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া অভিবাসীদের সংখ্যা ৩৬ হাজারেরও বেশি।
মঙ্গলবার আইওএমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে রেকর্ডসংখ্যক ৬৪ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী বিভিন্ন অভিবাসন রুটে মারা গেছেন। যাদের ৬০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে।
অভিবাসন রুটে থাকা সাগর ও মহাসাগরগুলোর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ভূমধ্যসাগর। উত্তর আফ্রিকার উপকূল থেকে রওনা হয়ে ইউরোপের দক্ষিণে পৌঁছাতে বছরের পর বছর ধরে এই রুটটিই ব্যবহার করা হচ্ছে।
আইওএম বলছে, অভিবাসনে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ রুট ভূমধ্যসাগরে মারা গেছেন ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। অনেক ঘটনার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তাই তাদের প্রতিবেদনে যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, তা ‘প্রকৃত সংখ্যার একটি ভগ্নাংশ’ বলে উল্লেখ করেছে আইওএম।
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আইওএমের ডেটা বিশ্লেষক আন্দ্রিয়া গার্সিয়া বোরহা। তিনি বলেছেন, ভূমধ্যসাগর ‘‘খুবই বিপজ্জনক অঞ্চল এবং যাত্রাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।’’
ভূমধ্যসাগরের পরিসংখ্যানকে অন্যান্য অভিবাসন রুটের তুলনায় ‘‘বাস্তবতার কাছাকাছি’’ বলে মনে করেন আন্দ্রিয়া। কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, সাহারা মরুভূমির মতো অঞ্চলগুলো পর্যবেক্ষণ করা কঠিন এবং সেখানকার নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার কাজটি মোটেও সহজ নয়।
আইওএম বলেছে, রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু ও নিখোঁজের মধ্যে প্রতি তিনজনে দু’জন অজ্ঞাত হিসাবে রয়ে গেছেন। অর্ধেকেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর ঘটনায় মৃতদের লিঙ্গ ও বয়সও শনাক্ত করতে পারেনি আইওএম। তাদের জাতীয়তা নিয়েও নেই প্রকৃত তথ্য।
সংস্থাটি জানিয়েছে, এই পরিসংখ্যান অভিবাসনের জন্য ‘‘নিরাপদ পথ না থাকায় সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে পালিয়ে আসা মানুষেরা যে বিপদের মুখে পড়ছেন, সেটাই ফুটে উঠেছে।’’
২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অভিবাসন রুটে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। এক দশক আগে থেকে এই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করছে আইওএম। সংস্থাটির মতে, ২০২৩ সালটি ছিল অভিবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপর্যয়কর বছর।
২০২৪ সালে এসে এখন পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, সেটিও ‘‘কম উদ্বেগজনক’’ বলতে চায় না সংস্থাটি। আইওএম বলছে, ভূমধ্যসাগরীয় রুট ব্যবহারকারী অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় এখন পর্যন্ত কিছুটা কমেছে। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
আইওএম বলেছে, অভিবাসন রুটে মৃত্যু ঠেকাতে হলে ‘‘নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন পথ তৈরির’’ পাশাপাশি ‘‘অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান জোরদার’’ করার কোনও বিকল্প নেই। জাতিসংঘের এই সংস্থার মতে, সমুদ্রে ‘‘আন্তর্জাতিক আইন মেনে এবং মানবিকতাকে সামনে রেখে’’ দুর্দশাগ্রস্ত অভিবাসীদের জন্য আরো বেশি সহায়তার প্রয়োজন ছিল। ইনফোমাইগ্রেন্টস।
এসএস