টানটান উত্তেজনার মাঝে মালদ্বীপের কাছে ভারতের ঘাঁটি উদ্বোধন
ভারতীয় সৈন্যদের ফেরত পাঠানো শুরুর কয়েক দিন আগে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের কাছের ‘‘কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ’’ দ্বীপে সামরিক নৌ ঘাঁটির উদ্বোধন করেছে ভারত। মালদ্বীপের সাথে সম্পর্কে টানটান উত্তেজনার মাঝে বুধবার ভারত মহাসাগরের মিনিকয় দ্বীপে নতুন ওই ঘাঁটি চালু করেছে নয়াদিল্লি।
ভারতের লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের মিনিকয় দ্বীপে আইএনএস জটায়ু নামের নতুন ঘাঁটি গত কয়েক বছর ধরে নির্মাণ করা হচ্ছিল। ভারত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে ভারতের সবচেয়ে দূরবর্তী ঘাঁটি এটি। গত কয়েক দশক ধরে মিনিকয় দ্বীপে ভারতের নৌবাহিনীর স্বল্প উপস্থিতি ছিল।
মালদ্বীপে অবস্থানরত প্রায় ৮০ জন ভারতীয় সৈন্যকে ফিরিয়ে নিতে নয়াদিল্লিকে চাপ প্রয়োগ করে আসছে মালে। এর মাঝেই দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের কাছে সামরিক উপস্থিতি জোরদারের অংশ হিসেবে ঘাঁটিটি স্থাপন করেছে ভারতের নৌবাহিনী।
গত বছর মালদ্বীপের চীনপন্থী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেশ থেকে তাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণা চালান। নির্বাচনে ভারত-বিরোধী অবস্থানের কারণে জনসাধারণের বিপুল সমর্থন পেয়ে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত ও মালদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভয়াবহ অবনতি ঘটে।
নির্বাচিত হওয়ার পরপরই নয়াদিল্লিকে মালদ্বীপে অবস্থানরত ৮৯ ভারতীয় সৈন্য ও নিরাপত্তা কর্মীকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার আল্টিমেটাম দেন মুইজ্জু। পরে এই বিষয়ে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বৈঠকও হয়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১০ মার্চের মধ্যে ভারতীয় সৈন্যদের প্রথম ব্যাচটি মালদ্বীপ ত্যাগ করবে। এ ছাড়া বাকি সৈন্যদের আগামী দুই মাসের মধ্যে মালদ্বীপ ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
মালদ্বীপে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ পূর্ব-পশ্চিমমুখী আন্তর্জাতিক শিপিং রুটগুলোর অবস্থান এই দ্বীপ দেশের পাশ ঘেঁষে রয়েছে। নতুন ঘাঁটিটি এই অঞ্চলে নয়াদিল্লির নজরদারির সম্প্রসারণ ঘটাবে।
ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে মালদ্বীপের। তবে এই ভারতপন্থী অবস্থানের অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোহাম্মদ মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকছে মালদ্বীপ।
মালদ্বীপের উত্তরে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে ভারতের লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান। সেখানকার মিনিকয় দ্বীপে নতুন নৌ ঘাঁটিটি স্থাপন করা হয়েছে; যা মালদ্বীপের একেবারে নিকটতম পয়েন্টে অবস্থিত। ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক যান চলাচল সুরক্ষিত করার জন্য ওই অঞ্চলটি নয়াদিল্লির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন করে স্থাপন করা ঘাঁটিটি ওই অঞ্চলে নয়াদিল্লির নজরদারি প্রচেষ্টায় সহায়তা করবে।
বুধবার এক বিবৃতিতে ভারতীয় নৌবাহিনী বলেছে, ‘‘মিনিকয় দ্বীপের ঘাঁটিটি লাক্ষাদ্বীপে তাদের পায়ের তলা মজবুত করবে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে সামরিক সক্ষমতা, কর্মক্ষমতা ও নজরদারির সম্প্রসারণ ঘটাবে।’’
ভারতীয় নৌবাহিনী অবশ্য দেশটির পশ্চিম উপকূলের কোচিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমএইচ-৬০আর ‘‘সিহক’’ হেলিকপ্টারের নতুন একটি স্কোয়াড্রনও নিয়োগ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ এই স্কোয়াড্রন আমাদের সামুদ্রিক নজরদারি এবং সাবমেরিন-বিরোধী যুদ্ধের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।’’
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ‘‘শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলে বেইজিংয়ের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে মালে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’’
এদিকে, এই চুক্তির বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ওয়াশিংটনের প্রধান কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে মালদ্বীপের নতুন চুক্তির বিষয়ে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। মালদ্বীপকে ‘‘মূল্যবান অংশীদার’’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। দেশটির সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উন্মুখ হয়ে আছে বলেও মন্তব্য করেছেন মার্কিন এই মুখপাত্র।
সূত্র: রয়টার্স, ইন্ডিয়া টুডে।
এসএস