গাজায় সমুদ্রপথে ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় সাগরপথে (মেরিটাইম করিডোর) ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মেরিটাইম করিডোর গঠনের জন্য ইতোমধ্যে তৎরতা শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে জন কিরবি বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনে আগে বেশ কয়েক বার গাজায় ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার প্রবাহ বৃদ্ধির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। মেরিটাইম করিডোরের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের চিন্তাটিও তার মন থেকেই এসেছে। গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন তৎপরতা চলছে। এটিও সেসব তৎপরতার অংশ।’
গাজা উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিমে ইসরায়েল সীমান্ত, দক্ষিণে মিসর সীমান্ত এবং পূর্বদিকে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। ২০০৫ সালে হামাস ক্ষমতা দখলের পর থেকে উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিম সীমান্ত সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে। এতদিন পর্যন্ত উপত্যকায় খাদ্য-ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার সরবরাহ দক্ষিণে মিসরীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতো; কিন্তু এখন সেই সীমান্তপথটিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি বাহিনীর গত ৫ মাসের অভিযানে উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে খাদ্যের অভাবে গাজায় মানুষের মৃত্যু শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সম্প্রতি গাজা বিমান থেকে খাদ্যদ্রব্যের বস্তা ফেলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জন কিরবি জানিয়েছেন গত তিন দিনে উপত্যকায় মার্কিন বিমান বাহিনীর তিনটি সি-১৩০ বিমান মোট ৬০ বান্ডেল খাদ্যদ্রব্য ফেলেছে। সামনে বিমান থেকে আরও খাদ্যদ্রব্য উপত্যকায় সরবরাহ করা হবে বলে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান কিরবি।
‘আমরা নিজেরাও জানি যে গাজার পরিস্থিতি কতখানি ভয়াবহ এবং এই খাদ্যসহায়তা সেখানে কিছুই নয়। কিন্তু এখন সেখানে যে পরিস্থিতি, তাতে সড়ক মাধ্যমে গাজার বাসিন্দাদের কাছে খাদ্য ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য আমরা অনেক দিন ধরেই বিকল্প চ্যানেল খুঁজছিলাম এবং বাইডেন প্রশাসন মনে করছে, ভূমধ্যসাগরে একটি মেরিটাইম করিডোর কার্যকর বিকল্প পথ হতে পারে।’
মেরিটাইম করিডোর গঠনের কাজ কতদূর হয়েছে— প্রশ্নের উত্তরে কিরবি বলেন, ‘সাইপ্রাসের (অন্যতম ভূমধ্যসগারীয় দেশ) সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। যাবতীয় মার্কিন সরবরাহ সাইপ্রাস থেকে গাজায় যাবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩০ হাজার ৫৩৪ জন, আহত হয়েছেন আরও ৭১ হাজার ৯৮০ জন ফিলিস্তিনি। নিহত ও আহতদের মধ্যে একটি বড় অংশই নারী, শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং বেসামরিক লোকজন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মানবিক বিরতি ঘোষিত হয়েছিল গাজায়। সে সময় ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তার পরিবর্তে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলও।
হিসেব অনুযায়ী, এখনও ১৩২ জন জিম্মি রয়েছেন হামাসের কব্জায়। তাদের ছাড়িয়ে আনতে গাজায় রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দফায় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
এসএমডব্লিউ