গাজায় ত্রাণবাহী গাড়ি অবরুদ্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল: ডব্লিউএফপি
টানা পাঁচ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে করে অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে অস্থায়ী তাঁবুসহ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এমন অবস্থায় তাদের জন্য জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সরবরাহ করা জরুরি হলেও সেই প্রচেষ্টা ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
সংস্থাটি বলেছে, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো তারা সহায়তা প্রদানের চেষ্টা চালালেও উত্তর গাজায় তাদের ত্রাণবাহী গাড়ি অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বুধবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো উত্তর গাজায় খাদ্য সহায়তা আনার প্রচেষ্টা চালানো হলেও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সেটি অবরুদ্ধ করে দিয়েছে বলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বলেছে, ত্রাণবাহী ১৪টি লরির কনভয়কে একটি চেকপয়েন্ট থেকে ‘ফিরিয়ে’ দেওয়া হয়েছে এবং পরে ‘উন্মত্ত একদল লোক’ এগুলো লুট করে।
বিবিসি বলছে, এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন একদিন আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, উত্তর গাজায় শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ডব্লিউএফপি বলেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘ব্যাপকভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ’ করার প্রচেষ্টা মঙ্গলবার থেকে আবার শুরু হয়েছে। ‘কিন্তু সেই প্রচেষ্টা অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে’।
সংস্থাটি বলছে, ওয়াদি গাজা চেকপয়েন্টে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ১৪টি লরির ওই কনভয়টিকে ফিরিয়ে দেয়। এরপর ট্রাকগুলোকে অন্য রুটে যেতে বলা হয় এবং একপর্যায়ে ‘পরে বিশাল সংখ্যক উন্মত্ত মানুষ কনভয়টিকে থামিয়ে দেয় এবং পরে তারা ট্রাকগুলো থেকে প্রায় ২০০ টন খাবার লুট করে।’
গত ১৫ দিনের মধ্যে উত্তর গাজায় খাদ্য সরবরাহের জন্য এটিই ছিল ডব্লিউএফপির প্রথম কোনও প্রচেষ্টা। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় ডব্লিউএফপি।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি সেসময় জানায়, ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণে তাদের সহায়তা কনভয়গুলো সম্পূর্ণরূপে বিপর্যয় এবং সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে। সংস্থাটি আরও বলেছিল, এই সিদ্ধান্তটি সহজভাবে নেওয়া হয়নি। তাদের সদস্যরা ব্যাপক ভিড়, বন্দুকযুদ্ধ এবং লুটপাটের সম্মুখীনও হয়েছেন।
আরও পড়ুন
এছাড়া জাতিসংঘ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলে আসছে। ডব্লিউএফপি বলেছে, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে এই ভূখণ্ডে ‘ক্ষুধা ও রোগের দ্রুত ছড়িয়ে’ পড়ার প্রমাণ রয়েছে।
এর আগে গাজার উত্তরাঞ্চলের শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে বলে মঙ্গলবার জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। তিনি বলেন, উত্তর গাজায় মারাত্মক মাত্রায় অপুষ্টি রয়েছে, শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে, জ্বালানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের গুরুতর ঘাটতি রয়েছে এবং হাসপাতাল ভবনগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গাজার এই অঞ্চলে আনুমানিক ৩ লাখ মানুষ খুবই অল্প খাদ্য বা বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বসবাস করছে।
এছাড়া জাতিসংঘ গত সপ্তাহে বলেছিল, গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’। জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, গাজা উপত্যকাজুড়ে কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ - যা ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ - বিপর্যয়কর মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছেন এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে দুই বছরের কম বয়সী প্রতি ছয়জন শিশুর মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
এর আগে গাজা শহরের দক্ষিণে মানবিক সহায়তা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে অন্তত ১১৬ জন নিহত হন বলে জানিয়েছিল গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
টিএম