গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকারের স্বীকৃতি দিলো ফ্রান্স
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। সোমবার নিম্নকক্ষ অ্যাসম্বলি ন্যাশনাল ও উচ্চ কক্ষ সেনেটের অধিকাংশ সদস্য এ সংক্রান্ত একটি বিলে সমর্থন জানিয়ে ভোট দিয়েছেন।
কয়েক দিন আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দপ্তর ও বাসভবন এলিসি প্রাসাদ থেকে ফ্রান্সের পার্লামেন্টে পাঠানো হয়েছিল বিলটি। সোমবার অ্যাসেম্বলি ন্যাশনাল ও সেনেটে যৌথভাবে বিলটির ওপর ভোট হয়।
অ্যাসেম্বলি ন্যাশনালের মোট আসনসংখ্যা ৫৭৭টি, সিনেটের ৩৪৮টি। ভোটের পর দেখা যায়, উভয় কক্ষের ৯২৫ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ৭৮০ জন বিলটির পক্ষে এবং ৭২ জন বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বাকি ৭৩ জন আইনপ্রণেতা ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন।
রাজধানী প্যারিস থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে ভার্সাইলেস প্রাসাদে হয়েছে এই ভোট। বিলটি পাসের পর প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে জড়ো হয়ে আতশবাজি জ্বালিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সাধারণ লোকজন ও গর্ভপাত বিষয়ক অধিকারকর্মীরা। তাদের অনেকের হাতেই ‘আমার শরীর আমার পছন্দ’ (মাই বডি মাই চয়েস) প্ল্যাকার্ড ছিল।
গর্ভপাত ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের তুলনায় ফ্রান্সের জনগণ অনেক উদার। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ গর্ভপাতকে অবৈধ কোনো ব্যাপার বলে মনে করেন না। সোমবার আইন পাসের মাধ্যমে জনগণের এই ধারণাকেই স্বীকৃতি দিয়েছে ফরাসি পার্লামেন্ট।
পার্লামেন্ট ভোটের পর এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটাল বলেন,‘এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আমরা নারীদের এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে আপনার শরীরের মালিক আপনি এবং এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এক্তিয়ার একমাত্র আপনার, অন্য কারোর নয়।’
গত শতকের সত্তরের দশক পর্যন্ত ফ্রান্সে গর্ভপাত আইনত অবৈধ বলে বিবেচনা করা হতো। ১৯৭৪ সাল থেকে দেশটির নারী অধিকার কর্মীরা গর্ভপাতের আইনগত বৈধতা আদায়ে তৎপরতা শুরু করেন। পরে আশির দশকে গর্ভপাতকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয় ফ্রান্সের বিচারব্যবস্থা।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই গর্ভপাত আইনগতভাবে স্বীকৃত; তবে ফ্রান্সই প্রথম দেশ— যেটি গর্ভপাতকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিলো।
ফরাসি নারী অধিকার কর্মী লরা সিরিমানি রয়টার্সকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়ের তৎপরতা শুরু হয়েছিল, কিন্তু ২০২২ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে তা থেমে যায়। আমাদের ভয় ছিল, ফ্রান্সেও একই ঘটনা ঘটে কি না।’
‘কিন্তু তা হয়নি। (বিল পাসের খবর শোনার পর থেকে) আমি বার বার আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছি...একজন নারী অধিকার কর্মী হিসেবে, একজন নারী হিসেবে।’
সোমবারের ভোটের পর গর্ভপাতের স্বীকৃতি সংক্রান্ত নতুন যে ধারাটি ফ্রান্সের সংবিধানে যুক্ত হতে যাচ্ছে, সেটির নাম আর্টিক্যাল ৩৪।
বিরোধীদের কটাক্ষ
ফ্রান্সের জনগণের অধিকাংশ গর্ভপাতের পক্ষে থাকলেও একে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে রাজি নন অনেকেই। সোমবারের ভোটের পর ফ্রান্সজুড়ে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি সমালোচনাও শুরু হয়েছে।
পার্লামেন্ট ভোটের আগে এক বার্তায় দেশটির প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ম্যারিন লে পেন বলেন, ‘এই ইস্যুটির সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু আমি বলতে চাই, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ জনগণের আবেগকে তার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ব্যবহার করছেন। আগামী নির্বাচনে যে তিনি এই ব্যাপারটিকে কাজে লাগাবেন, তা জনগণ বুঝতে পারছে।’
ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জা অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্যাসকেল মরিনিয়েরে রয়টার্সকে বলেন, ‘যে বিষয়টিকে সবাই নারীদের বিজয় বলে ভাবছে, তা আসলে নারীদের পরাজয়; আর পরাজয় সেই সব শিশুদের জন্য, যারা কোনোদিন পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে না।’
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ