মিয়ানমার : তিন দিনে ৩ ঘাঁটি, ২০ সেনা হারিয়েছে জান্তা
মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দুই জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ) এবং এথনিক আর্মড অর্গানাইজেশন্সের (ইআও) কাছে গত তিন দিনে আরও ৩টি ঘাঁটি এবং মোট ২০ জন সেনা হারিয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা।
পিডিএফ এবং ইআওর মুখপাত্রদের বরাত দিয়ে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি জানিয়েছে, গত তিন দিনে কাচিন ও রাখাইন প্রদেশ এবং মান্দালয়, সাগাইং, মেগওয়ে এবং তানিনথারি জেলায় ঘটেছে এসব ঘটনা। গত তিন দিন ধরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর তীব্র লড়াই চলছে এই দুই প্রদেশ ও জেলাগুলোতে।
যে তিনটি সামরিক ঘাঁটির দখল হারিয়েছে জান্তা, সেগুলোর সবই মিয়ানমারের সর্বউত্তরের প্রদেশ কাচিনে। প্রদেশটির মানসি শহরে তিন দিন ধরে ব্যাপক সংঘাতের পর নিকটবর্তী মাজি গাং এলাকার এই ঘাঁটিগুলোর দখল নিয়েছে পিডিএফের কাচিন প্রাদেশিক শাখার যোদ্ধারা। পিডিএফের পক্ষে এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিয়েছে কাচিনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কিয়া)।
কাছাকাছি অবস্থিত এই তিন ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিনের হাতে। গত তিন দিনের সংঘাতে জান্তা বাহিনীর গুলিতে কিয়া’র একজন কর্মকর্তা নিহত এবং পিডিএফের ৫ জন যোদ্ধা আহত হয়েছেন। এর আগে জানুয়ারিতে কাচিনে একটি পুলিশ স্টেশনসহ ৬টি ঘাঁটি-সামরিক স্থাপনার দখল নিয়েছে কিয়া।
এদিকে গত ২ দিন আগে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রদেশ রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে’র পোন্নাগিউন শহরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হয়েছে রাখাইনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ)। এই শহরে সামরিক বাহিনীর যে ঘাঁটিটি রয়েছে, সেটি মিয়ানমারে জান্তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি। এই ঘাঁটিটির নিয়ন্ত্রণও লাইট ইনফ্যান্ট্রি বিভাগের হাতে।
২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও বন্দি করা হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।
অভ্যুত্থানের পরপরই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ। প্রথমদিকে সেই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ উপায়ে দমন করলেও এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেয় ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার। এ পরিস্থিতে ২০২২ সালের শুরু থেকে গণতন্ত্রপন্থী জনগণের একটি অংশ জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়া শুরু করে।
গত অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর। সেই যুদ্ধে সাফল্যও পা্চ্ছে বিদ্রোহীরা। গত চার মাসে বিদ্রোহিদের কাছে চল্লিশটিরও শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা।
সূত্র : দ্য ইরাবতি
এসএমডব্লিউ