হুথিদের হামলায় ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা, বলছে ব্রিটিশ রপ্তানিকারকরা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বর আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। আর এরই প্রতিবাদে লোহিত সাগরে ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোর ওপর হামলা করে চলেছে ইয়েমেনে সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি।
হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ বড় প্রভাব পড়েছে। এবার সে কথা স্বীকারও করে নিয়েছে যুক্তরাজ্যের রপ্তানিকারকরা। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি রপ্তানিকারক বলেছে, লোহিত সাগরে হুথিদের হামলা তাদের ব্যবসা ব্যাহত করছে।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি রপ্তানিকারকের ব্যবসা লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথিদের পরিচালিত হামলায় ব্যাহত হয়েছে। একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিসি) জরিপ অনুসারে, দেশটির ৫৫ শতাংশ রপ্তানিকারক জাহাজ চলাচেলে বড় ধরনের খরচ এবং বিলম্বের কথা জানিয়েছেন। আর একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন ৫৩ শতাংশ উৎপাদনকারী এবং ব্যবসা-থেকে-ভোক্তা পরিষেবা সংস্থাগুলো।
আল জাজিরা বলছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এক হাজার সংস্থার ওপর পরিচালিত সমীক্ষা অনুসারে, সকল ধরনের ব্যবসার মধ্যে ৩৭ শতাংশ কোম্পানি হুথিদের আক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলছে, কন্টেইনার ভাড়ার খরচ চারগুণ বেড়েছে, আর পণ্য ডেলিভারির সময় বেড়েছে চার সপ্তাহ পর্যন্ত।
বিসিসির বাণিজ্য নীতির প্রধান উইলিয়াম বেইন রোববার বলেছেন, ‘শিপিং-মালবাহী শিল্পে বিদ্যমান অসুবিধাগুলো মোকাবিলায় আমাদের অতিরিক্ত কিছু সক্ষমতা রয়েছে, আর সেটিই আমাদের কিছু সময় দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমাদের গবেষণা বলছে- বর্তমান পরিস্থিতি যত বেশি সময় ধরে চলতে থাকবে, তত বেশি বাড়তি ব্যয়ের চাপ তৈরি হতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।’
আল জাজিরা বলছে, ইরান-সমর্থিত হুথিরা গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে। লোহিত সাগরের এই নৌপথটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত শিপিং রুট।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের অধীনে থাকা ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি দেখানোর জন্য ইয়েমেনের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের সাথে সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে বলেও দাবি করেছে।
ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অনুসারে, হুথিদের এই হামলা বিশ্ব বাণিজ্যে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটিয়েছে। লোহিত সাগরকে সুয়েজ খালের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরের সংযুক্তকারী এই রুটে জাহাজ চলাচল আনুমানিক ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এই মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয়-সবচেয়ে জনপ্রিয় চা ব্র্যান্ড টেটলি টি বলেছিল, লোহিত সাগরে বাধার কারণে তারা ‘অনেক কঠোর’ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
আরও পড়ুন
অবশ্য এসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় হুথিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বেশ কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। এছাড়া হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুজাতিক নৌ টাস্কফোর্সও গঠন করেছে যার লক্ষ্য লোহিত সাগরের ট্রানজিট রুটে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা রক্ষা করা।
শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর ১৮টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ইরান-সমর্থিত হুথিদের বিরুদ্ধে পরাশক্তি এই দুই মিত্র দেশের এটি চতুর্থদফা যৌথ অভিযান।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, শনিবারের এসব হামলায় হুথিদের স্টোরেজ সুবিধা, ড্রোন, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার এবং সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর একটি হেলিকপ্টারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বলছে, হুথিদের সক্ষমতাকে ‘আরও অবনমিত’ করতে কাজ করেছে মিত্ররা।
যদিও হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
টিএম