পাকিস্তানের নির্বাচনকে ‘মাদার অব অল রিগিং’ বললেন ইমরান খান
পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্যাপক বিতর্কিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনকে ‘‘মাদার অব অল রিগিং’’ বলে অভিহিত করেছেন দেশটির কারান্তরীণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মঙ্গলবার আদিয়ালা কারাগারে বন্দি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এই প্রতিষ্ঠাতা এমন মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেনি তার বোন আলিমা খান।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার বোন আলিমা খান। সেখান থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পর জনগণের ম্যান্ডেট ‘‘চুরি’’ হয়েছে। নির্বাচনের দিন দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইমরান খান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের প্রকৃত ফলাফল আড়াল করার জন্য এটাকে ব্যবহার করা হয়েছে।
আলিমা খানের মতে, রাওয়ালপিন্ডির সাবেক নির্বাচন কমিশনারের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইমরান খান। এখন তিনি এসবের অবসান চান।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত প্রার্থীরা গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পেয়েছে। দেশটির সংসদের ৩৩৬ আসনের নিম্নকক্ষে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৬৯টি আসনে পৌঁছানোর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দলে টানার চেষ্টা করছে। ৯৪টি আসনে জয় নিয়ে জাতীয় পরিষদে সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পিটিআই। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) যথাক্রমে ৭৯ ও ৫৪টি আসনে জয় পেয়েছে।
পাকিস্তানে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি। দেশটির দুই রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) মাঝে জোট সরকার গঠনের আলোচনা চললেও কোনও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। রাজনৈতিক এই অচলাবস্থার পেছনে দল দুটির নেতারা পরস্পরকে দায়ী করেছে।
ইমরান খানের সাথে কারাগারে সাক্ষাতের পর আলিমা খানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ৫ মিনিটি ৪৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিডিওতে তার ভাই ইমরান খানের বার্তা গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন তিনি।
আলিমা খান বলেন, গত নির্বাচনে ‘‘মাদার অব অল ইউ-টার্ন’’ যার অর্থ ভোটের পরিবর্তে বুটকে সম্মান দেওয়া এবং ‘‘মাদার অব অল সিলেকশন’’ হয়েছে। অভিযুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ এবং ইমরানের মাথায় মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও নওয়াজ শরিফকে দায়মুক্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি এসব মন্তব্য করেছেন।
তবে ইমরানের মূল বক্তব্য প্রাক-নির্বাচন, ভোট চলাকালীন এবং ভোট-পরবর্তী কারচুপি নিয়ে জানিয়েছেন আলিমা খান। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে ‘মাদার অব অল রিগিং’ ঘটেছে। ওই সময় তারা পিটিআইয়ে নিবন্ধন বাতিল, সব প্রার্থীকে নিষিদ্ধ, আমাদের (ক্রিকেট) ব্যাট প্রতীক ছিনিয়ে নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, পিটিআইয়ের নির্বাচনী সমাবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন উপায়ে অন্য সবাইকে প্রাক-নির্বাচনী কারচুপির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
ইমরান খান বলেছেন, এটা ‘‘মাদার অব অল রিগিং।’’ নির্বাচনের দিন সব ধরনের কারচুপি করা হয়েছে। ভোটারদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া হয়নি। ইন্টারনেট বন্ধ করে, ভোটকেন্দ্রে কারচুপি করে ভোটারদের অপমান করা হয়েছে।
সূত্র: জিও নিউজ, ডন, পিটিআই।
এসএস