প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে যা বললেন বিলাওয়াল
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, তার দলের জন্য যারা ভোট চেয়েছে কেবল তাদের সাথেই পিপিপি জোট সরকার গঠনের আলোচনা এগিয়ে নেবে এবং মন্ত্রিসভায় কোনও পদ চাইবে না। তবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে তার বাবা আসিফ আলী জারদারি পিপিপির প্রার্থী হবেন। রোববার দেশটির সিন্ধ প্রদেশের থাট্টায় এক সমাবেশে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিলাওয়াল ভুট্টো বলেছেন, ‘‘দেশে ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আমরা আসিফ আলী জারদারিকে আমাদের দলীয় প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আর তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর এই আগুন নিভিয়ে ফেলবেন। পাশাপাশি কেন্দ্র ও প্রদেশগুলোকে রক্ষা করবেন তিনি।’’
পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকার এবং দেশের উন্নতির জন্য কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন পিপিপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, আমরা যদি এভাবে এগিয়ে যেতে চাই এবং ঘৃণা ও রাজনীতির এই বিভাজন ছড়িয়ে দিতে চাই, তখন আপনাকে ধর্মীয় সীমারেখায় বিভক্ত করার চেষ্টা হবে। অন্যরা আপনাকে জাতিগত সীমারেখায় এবং সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে বিভক্ত করার চেষ্টা করবে।
বিলাওয়াল পীর পাগারা এবং মাওলানা ফজলুর রহমানকে তাদের সব ফরম-৪৫ কে তার কাছে আনার এবং ভুল প্রমাণিত হলে পরের দিন তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি দুটি আসন জিতেছি; যার মধ্যে উপনির্বাচনের জন্য একটি আসন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেব। সেই আসনে এসে আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কেমন হয়? তখন দেখা যাবে আপনাদের শক্তি কত।’’
আরও পড়ুন
নওয়াজ শরিফ নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) পক্ষ থেকে জোট সরকার গঠনের প্রস্তাবের বিষয়েও কথা বলেছেন বিলাওয়াল ভুট্টো। সমাবেশে তিনি পিএমএলের ক্ষমতার ভাগাভাগির প্রস্তাবের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। এ সময় দুই দলের মাঝে প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন বলে জানান পিপিপির এই চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘‘পিএমএল-এনের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, আমরা তিন বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকবো। তারপরে আপনি বাকি দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব নিতে পারবেন।’’ বিলাওয়াল বলেন, আমি এই প্রস্তাবের জবাবে না বলেছি। আমি এভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না বলে জানিয়ে দিয়েছি। কেবল পাকিস্তানের জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত হলে আমি প্রধানমন্ত্রী হবো।
পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, তার দল সারাদেশ থেকে নির্বাচনী অভিযোগ সংগ্রহ করে যথাযথ ফোরামে উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা যদি ব্যর্থ হই, তাহলে আপনাদের কাছে আসব এবং একসাথে প্রতিবাদ করব।
অনিশ্চয়তা ও ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্ররা ৯২টি আসনে জয় পান। নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ (পিএমএলএন) পায় ৭৫টি আসন। আর বিলাওয়াল ভু্ট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি আসনে জয় তুলে নেয়। বাকি আসনগুলো পায় ছোট দলগুলো।
নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনও দল। নির্বাচন হওয়ার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও— কোন দল সরকার গঠন করবে সেটি এখনো নিশ্চিত হয়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপর সরকার গঠনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিল নওয়াজ শরিফের পিমএলএন। তারা বিলাওয়াল ভু্ট্টোর পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা শুরু করে। তবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জানান তারা জোট সরকারে যোগ দেবে না।
আরও পড়ুন
এদিকে, রোববার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) মনোনীত প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ওমর আইয়ুব খান বলেছেন, কেন্দ্র ও প্রদেশগুলোতে সরকার গঠন করবে পিটিআই। তিনি বলেন, দেশের জনগণ ইমরান খানকে চায়। জনগণের ম্যান্ডেট মেনে নিতে তিনি দেশটির অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।
ওমর আইয়ুব বলেছেন, এই দলগুলো ৪০টি আসনও জিততে পারেনি। তাদের এবং অন্য সবাইকে জনগণের কথা শুনতে হবে। দেশের জনগণ ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিয়েছে এবং তারা সুন্দর পাকিস্তান চায়।
বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও নওয়াজ শরিফ নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ঘটে যাওয়া জালিয়াতির প্রধান সুবিধাভোগী বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। পিটিআই মনোনীত এই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বলেছেন, কে আগে অন্যের পিঠে ছুরি চালায় তা দেখার অপেক্ষায় ছিল এই দুই দল।
আইয়ুব খান বলেন, ‘‘ইমরান খান এর আগে যা বলেছিলেন জামায়াত নেতা ফজলুর রহমান তা এখন বলেছেন। পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা ভোট আনা হয়েছিল, তা পরিকল্পিত ছিল। ফজলুর রহমান এখন এটা স্বীকার করেছেন এবং এটাই সবচেয়ে বড় সমর্থন।’’
তিনি বলেন, দেশের ৩ কোটি মানুষ পিটিআই ও ইমরান খানকে ভোট দিয়েছে। কারণ তারাই পাকিস্তানকে এই মন্দা থেকে বের করে সঠিক পথে আনতে সক্ষম।
সূত্র: ডন, জিও নিউজ।
এসএস