সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক, পালাচ্ছেন মিয়ানমারের বাসিন্দারা
সাধারণ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানের নিয়ম জারি করতে যাচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। গত সপ্তাহে এমন ঘোষণা আসে দেশটির জান্তার পক্ষ থেকে।
ওই ঘোষণায় বলা হয়, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সকল পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী সকল নারীকে দুই বছরের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে। আর এমন ঘোষণার পর দেশটির তরুণ-তরুণীরা দলে দলে মিয়ানমার ছাড়া শুরু করেছেন অথবা ছাড়ার চেষ্টায় আছেন।
বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) থাই দূতাবাসের সামনে এক হাজার মানুষকে ভীড় করতে দেখা গেছে। যাদের সবাই থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছেন।
২০২১ সালে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক জান্তা। এরপর তারা মার্শাল ল জারি করে। কিন্তু ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পড়ে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী। গত কয়েক মাসে বিদ্রোহীদের কাছে একাধিক অঞ্চল হারিয়েছে সামরিক জান্তা। এছাড়া অনেক সৈন্যও হারিয়েছে তারা। বিদ্রোহীদের ঠেকাতে এখন দেশের সব তরুণ-তরুণীকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করানোর পরিকল্পনা করছে তারা।
গত শনিবার সামরিক জান্তা সর্বপ্রথম এ ধরনের ঘোষণা দেয়। এরপরই থাই দূতাবাসের সামনে ভিসার জন্য প্রতিদিন শত শত তরুণ-তরুণী লাইন ধরা শুরু করেন।
এএফপির সাংবাদিক জানিয়েছেন, গত শনিবারের আগেও থাই দূতাবাসের সামনে প্রতিদিন মাত্র ১০০ জনকে ভিসার জন্য আসতে দেখা যেত। কিন্তু এই সংখ্যা এখন এক হাজার থেকে দুই হাজার পর্যন্ত হচ্ছে।
হঠাৎ করে ভিসা প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় থাই দূতাবাসও হিমশিম খাচ্ছে। এ কারণে তারা এখন টোকেন সিস্টেম করছে। যা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০০ জনকে দেওয়া হচ্ছে।
অং ফিউ নামের (ছদ্মনাম) ২০ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী এএফপিকে জানিয়েছেন, তিনি বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় দূতাবাসের সামনে এসেছেন। এরপর মধ্যরাত পর্যন্ত নিজের গাড়িতে ঘুমিয়ে টোকেনের জন্য লাইন ধরেছেন।
তিনি বলেছেন, “আমাদের তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। রাত তিনটার দিকে পুলিশ নিরাপত্তা দরজা খুলে দেয়। এরপর টোকেনের লাইনের জায়গা পেতে আমাদের দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। আমরা টোকেন পাওয়ার পরও; যারা পায়নি তারাও লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের আশা ছিল বাড়তি কোনো টোকেন থাকলে হয়ত পাবে।”
২০১০ সালেও মিয়ানমারে একবার সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু এই নিয়ম কখনো কাজে লাগানো হয়নি। ফলে সকলের চিন্তা কীভাবে কী হবে এ নিয়ে।
সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে কী কী করতে হবে এ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ও জানায়নি সামরিক জান্তা।
অং ফিউ বলেছেন, “আমি পর্যটন ভিসা নিয়ে ব্যাংকক যাব। আশা করছি সেখানে লম্বা সময় থাকব। আমি কাজ করব না কি পড়ালেখা সেটি নির্ধারণ করিনি। তবে আমি শুধু মিয়ানমার ছাড়তে চাই।”
সাধারণ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নেওয়ার পাশপাশি জান্তাপন্থি মিলিশিয়াকে অস্ত্র দিচ্ছে সামরিক জান্তা।
গত সপ্তাহে জান্তার মুখপাত্র ঝ মিন তুন জানান, সাধারণ মানুষকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে।
২০২১ সালের পর সেনাবাহিনীর হাতে মিয়ানমারের ৪ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া আটক করা হয়েছে আরও ২৬ হাজার মানুষকে।
সাধারণ মানুষের ওপর দমন নিপীড়ন চালালেও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে জান্তা বাহিনী।
সূত্র: এএফপি
এমটিআই