গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা হামাসের, ধরে রেখেছে নিয়ন্ত্রণও
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার চারমাস পরও গাজায় কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে হামাস।
এমনকি নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার পাশাপাশি গাজার প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীকে আক্রমণও করে চলেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। রোববারও (৪ ফেব্রুয়ারি) হামাসের এমন হামলার শিকার হয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা রোববার গাজা উপত্যকার দুটি প্রধান শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছে। সৈন্য ও ট্যাংকের বিশাল বহর নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী এগুলো দখল করার কয়েক সপ্তাহ পরেও এমন হামলা চলছে।
আর এতেই বোঝা যায়, যেকোনও সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির আগে হামাস এখনও কিছু নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার চার মাস পরও ঘনবসতিপূর্ণ এই ভূখণ্ডের উত্তরে অবস্থিত গাজা শহরে এবং দক্ষিণে খান ইউনিসে অবিরাম লড়াই চলছে।
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের ২৪টি যুদ্ধ ব্যাটালিয়নের মধ্যে ১৭টিকে চূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাকিদের বেশিরভাগই দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় - রাফাহ-সহ ভূখণ্ডটির মিশরীয় সীমান্তে রয়েছে।
নেতানিয়াহুর অফিসের দেওয়া একটি বিবৃতি অনুসারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা তাদেরও দেখে নেব।’
অবশ্য হামাস কখনও তাদের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে না।
রয়টার্স বলছে, রাফাহতে ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলা সেখানে অবস্থানরত লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে বিপুল সংখ্যক এসব মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে আগেই পালিয়ে যান এবং রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এদিকে ইসরায়েলের সম্ভাব্য এই হামলা মিসরকেও উদ্বিগ্ন করছে। উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি বলছে, তারা আর নতুন করে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের কোনও আগমন মানবে না।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মিসরের সাথে সমন্বয় করবে এবং রাফাহতে হামলার আগে গাজার আরও উত্তরে বাস্তুচ্যুত বেশিরভাগ লোককে সরিয়ে নেওয়ার উপায় খুঁজবে তারা।
ফিলিস্তিনিরা অবশ্য ইতোমধ্যেই সেখানে ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলার খবর দিয়েছে। যার মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় একটি বাড়িতে দুটি মেয়েও নিহত হয়েছে।
শোকার্তরা যখন মৃত শিশুদের বিদায় জানাচ্ছেন, তখন মোহাম্মদ কালুব নামে তাদের একজন আত্মীয় বলেন, রাফাহ-এর আল-সালাম পাড়ায় নারী ও শিশুতে ভরা একটি ঘরে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘গাজায় (একপাশের) তারের বেড়া থেকে (অন্যপাশের) তারের বেড়া (উত্তর থেকে দক্ষিণের সীমানা) পর্যন্ত কোনও নিরাপদ স্থান নেই।’
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্য গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ইসরায়েলের পৃথক বিমান হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন। দেইর আল-বালাহ হলো ভূখণ্ডটির দ্বিতীয় শহর যেখানে ইসরায়েল এখনও ট্যাংক মোতায়েন করেনি।
এছাড়া রোববার ভোর হওয়ার আগে চালানো বিমান হামলায় মিসরীয় অর্থায়নে পরিচালিত আবাসন প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা উত্তর গাজায় সাত হামাস বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে এবং অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
ইসরায়েলের আর্মি রেডিও বলেছে, এলাকার সৈন্যরা হামাসের দুটি বাংকারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। একটি মিশন বলেছে, এসব স্থানে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, ‘গাজা শহরকে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। (কিছু স্থান থেকে ইসরায়েলি সেনাদের) প্রত্যাহার তারই একটি কৌশল।’
টিএম